ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ আরও কমিয়ে দিল রাশিয়া। নর্ড স্ট্রিম–১ পাইপলাইন দিয়ে আজ বুধবার সক্ষমতার তুলনায় ২০ শতাংশ কম গ্যাস ইউরোপে সরবরাহ করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও রাশিয়ার মধ্যে বিরোধের জেরে এ গ্যাস সরবরাহ কমানো হলো।
দাবদাহ শেষে ইউরোপে শীত এগিয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় আসছে শীতে এ সংকট মোকাবিলা ইউরোপের জন্য কঠিন ও ব্যয়বহুল হবে।
তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ যতটুকু গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব, সেই পরিমাণ গ্যাস ইউরোপকে দিচ্ছে দেশটি। সেই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের বিষয়টিও যুক্ত করেছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। তিনি বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে যে কারিগরি জটিলতা দেখা দিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রেও। তবে ইইউ বলছে, জ্বালানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে রাশিয়া।
নর্ড স্ট্রিম–১ পাইপলাইন ব্যবহার করে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এই গ্যাস সরবরাহের কাজটি করে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় জ্বালানি প্রতিষ্ঠান গাজপ্রম। ইউরোপে যে গ্যাস সরবরাহ কমবে, সেই কথা গত সোমবারই জানিয়েছিল গাজপ্রম। এরপর বুধবার পেসকভ আবারও বলেন, নর্ড স্ট্রিম–১–এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ হলে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ আবারও বাড়াতে পারবে গাজপ্রম। সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন, পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার করণে যদি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ না করা যায়, তাহলে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না।
যদিও পাইপলাইনে কারিগরি ত্রুটির কথা নাকচ করে দিয়েছে জার্মানি। রাশিয়ার কাছ থেকে ইউরোপের যে দেশগুলো সবচেয়ে বেশি গ্যাস আমদানি করে, তাদের অন্যতম জার্মানি। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছেন, গ্যাস সরবরাহ কমানোর মতো কোনো কারিগরি ত্রুটি নর্ড স্ট্রিম–১ পাইপলাইনে নেই।
জার্মানির জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান ক্লাউস মুলার বলেন, নর্ড স্ট্রিম–১ পাইপলাইনের সক্ষমতার তুলনায় ৪০ শতাংশ কম গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে মঙ্গলবার পর্যন্ত। এই সরবরাহ বুধবার ২০ শতাংশে নেমে এসেছে।
গত জুন পর্যন্ত গাজপ্রম নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইন ব্যবহার করে জার্মানিতে প্রতিদিন ১৬ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করত। ১৪ জুন থেকে সেই সরবরাহ ১০ কোটি ঘনমিটারে নেমে আসে। ১৫ জুন রাশিয়া সেটা ৬ কোটি ৭০ লাখ ঘনমিটারে নামিয়ে আনে। এখন সেটা অর্ধেকে নেমে এসেছে। যুদ্ধের আগে ইউরোপের দেশগুলো তাদের চাহিদার ৪০ শতাংশ গ্যাস রাশিয়া থেকে আমদানি করত। আর তেল আমদানি করত ৩০ শতাংশ। এখন সেটা অনেক কমে গেছে।
এদিকে রাশিয়ার থেকে গ্যাস কম আসবে এই সিদ্ধান্ত জানার পরই গত মঙ্গলবার জরুরি বৈঠক করেছে ইইউর দেশগুলো। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলের খবরে বলা হয়েছে, আগস্ট থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রয়োজনের তুলনায় ১৫ শতাংশ গ্যাস কম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউর দেশগুলো। আসছে শীতে যাতে গ্যাসসংকট না দেখা দেয়, সেই জন্য এই পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
ভারী শিল্পের দেশ জার্মানি তার শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস কম ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বেচ্ছায় এই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্লাউস মুলার।
তবে প্রতিষ্ঠানগুলো অন্য সতর্কবার্তা দিয়েছে। তারা বলছে, জ্বালানি খরচ কমাতে হলে অবশ্যই তাদের উৎপাদন কমাতে হবে।