হাসান, মওলানা ও নাথান নামের জাকার্তা থেকে আসা ইন্দোনেশিয়ার তিন তরুণ জার্মানির গেরা শহরে জিএম নামের এক মেশিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিতে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরু করছেন। ফাইলিং ও করাত চালানো দিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হলো।
এখনো তাঁরা সে বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারছেন না। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে জার্মানিতে এসেছেন। জার্মানিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে আরও সুযোগের আশা করছেন তাঁরা।
হাসানদের বস হচ্ছেন ফ্রাংক গ্নিশভিৎস। গত বছর তিনি একজনও জার্মান শিক্ষানবিশ খুঁজে পাননি। তাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা তরুণদের প্রতি তাঁর বিশাল প্রত্যাশা রয়েছে। ফ্রাংক বলেন, ‘সেখানে অবশ্যই অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তাঁরা এখানে আসতে চান। সেখান থেকে তাঁদের এখানে পাঠানো হয়। নির্দিষ্ট কারণে তাঁরা এই পেশা গ্রহণ করতে চান। হয়তো আমাদেরও সাহায্য করবেন।’
ফাবিয়ান শার্ফ সরাসরি এই তিনজনকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। প্রথমবার ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষানবিশ এসেছেন। এ পর্যন্ত তাঁদের কাজে তিনি সন্তুষ্ট। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষানবিশেরা এই সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তাদের সময়জ্ঞান খুবই ভালো। কর্তব্যের চেয়ে এটাকে সুযোগ হিসেবেই দেখেন। জার্মান শিক্ষানবিশদের ক্ষেত্রে প্রায়ই যেমনটা মনে হয়।
রন শেনকে এমন শিক্ষানবিশ সরবরাহ করেন। মিউনিখে আন্তর্জাতিক বেকিং বাণিজ্য মেলায় তিনি আবার নতুন গ্রাহক খুঁজে পেয়েছেন। স্নাইডার বেকারি কোম্পানির প্রধান ইয়োর্গ আপরাট মনে করেন, ‘জার্মানির তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের কাছে এই পেশা তেমন আকর্ষণীয় নয়। সুতরাং আমার মতে, দেশের বাইরে নজর দিতে হবে। সত্যি বলতে কি, আরও দূরে খোঁজ করতে হবে।’
অতীতে শেংকে ভিয়েতনামে জার্মান ভাষার শিক্ষক ছিলেন। জার্মানি সম্পর্কে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের বিশাল আগ্রহের কারণে তিনি ‘গো-জার্মান’ নামের সংস্থা খোলেন। এ পর্যন্ত তিনি এক হাজারের বেশি শিক্ষানবিশের হদিস দিয়েছেন। প্রশিক্ষণের পর তাঁরা জার্মানিতেই থেকে যেতে যান।
শেনকের মতে, জার্মানিতে বেতনের যে মাত্রা, পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম বা মালয়েশিয়ায় ফিরে অবশ্যই সেটা পাওয়া যায় না। সেখানে কাজ করে মাসে বড়জোর তিন শ বা চার শ ইউরো আয় করা সম্ভব।
জার্মানির বেকারিগুলোতে দক্ষ কর্মীর অভাব প্রকট হয়ে উঠছে। গো-জার্মানের এক গ্রাহক তাই চলতি বছরেও আবার ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষানবিশ নিয়োগ করতে চান। একটি বেকারির মালিক হিসেবে ফ্রাংক ভিন্টারহাল্টার মনে করেন, ‘এ পর্যন্ত ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে অবশ্যই আগ্রহ বেড়ে গেছে। গো–জার্মান এখানে আছে বলে আমার কিছুটা ঈর্ষাও হচ্ছে। কারণ, তখন বাকিরাও ভালো কর্মী পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।’
লাইপসিশ শহরের এক সংস্থার কর্মকর্তাও ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা শিক্ষানবিশদের নিয়ে সন্তুষ্ট। পাতাকান নামের এশীয় রেস্তোরাঁয় অতিথিদের সামনেই খাবার প্রস্তুত করা হয়। লালা, মিশেল ও নাথানের দলে নিজেদের ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছেন।
পাতাকান রেস্তোরাঁর ম্যানেজার আলেক্সান্ড্রা ভুলো বলেন, ‘বলতেই হবে, প্রায় দেড় বছর পর আমাদের অভিজ্ঞতা শুধুই ইতিবাচক। কারণ, তাঁদের কঠিন পরিশ্রমের মানসিকতা রয়েছে। অত্যন্ত ভদ্র ও সব সময় নির্ভরযোগ্যও বটে।’
এই তিনজন সিস্টেম ক্যাটারিং ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। রান্না, অতিথিদের সেবার সঙ্গে ব্যবসার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও শিক্ষা নিতে হয়। তাঁরা জার্মানিতেই থেকে যেতে চান।
হাসান, মওলানা ও নাথানের ছুটি হলো। তাঁরা একসঙ্গে একটি তিন কামরার ফ্ল্যাটে থাকেন। বাসার জন্য কিছুটা মন কেমন করে। মা-বাবার সঙ্গে অনেক কথা বলেন। মওলানার মা ছেলের কাজে গর্ব বোধ করেন। তাঁর মতে, জার্মানিতে প্রশিক্ষণ ছেলের কর্মজীবনে অনেক সুযোগ এনে দেবে। তবে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মওলানা ও হাসানের এখনো কোনো ধারণা নেই। শুধু নাথান জার্মানিতে থেকে যেতে বদ্ধপরিকর। তিনি বিমান নির্মাণ নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখেন।