ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনে উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র্যালির (আরএন) জয় আটকানোর প্রচেষ্টায় সফলতা এসেছে বলেই আভাস পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আসন পাচ্ছে বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট (এনপিই)।
রোববার দেশটিতে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ শেষে বুথফেরত জরিপে এমনটাই বলা হচ্ছে। এরইমধ্যে পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন নির্বাচনে অপর দুই প্রতিপক্ষ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ জোট টুগেদার অ্যালায়েন্স এবং উগ্র ডানপন্থি ন্যাশনাল র্যালির নেতারা। অপর দিকে সরকার গঠনের আমন্ত্রণ জানাতে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাম জোটের নেতারা।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের দেওয়া বুথফেরত জরিপের তথ্য মতে, ৫৭৭ আসনের পার্লামেন্টে ১৭২ থেকে ২১৫টি আসন পেতে চলেছে বাম জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেতে যাচ্ছে মাখোঁর মধ্যপন্থী জোট টুগেদার অ্যালায়েন্স। তারা পেতে পারে ১৫০ থেকে ১৮০টি আসন। আর ১১৫ থেকে ১৫৫টি আসন নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে থাকতে পারে ন্যাশনাল র্যালি।
ফ্রান্সে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় ২৮৯টি আসন। সেক্ষেত্রে বাম জোটকে সরকার গঠন করতে হলে অন্যদের সমর্থন নিতে হবে, তাতে ঝুলন্ত পার্লামেন্ট গঠনের সম্ভাবনাই বেশি।
গত রোববার অনুষ্ঠিত প্রথম দফার ভোটে সবচেয়ে বেশি ৩৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কট্টর ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত মারিন লো পেনের দল ন্যাশনাল র্যালি (আরএন)। বর্ণবাদ ও ইহুদিবিদ্বেষী ইতিহাসের কারণে আরএনকে দীর্ঘ সময় ধরে দূরে সরিয়ে রেখেছিল ফ্রান্সের জনগণের বড় একটি অংশ। তবে সম্প্রতি দলটির সমর্থন বেড়ে যায়। এর পেছনে কাজ করেছে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট মাখোঁর প্রতি ভোটারদের ক্ষোভ।
প্রথম দফা ভোটের পর অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে আসা ন্যাশনাল র্যালিকে নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েন ফ্রান্সের উদার ও মধ্যপন্থীরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কট্টর ডানপন্থী কোনো দল দেশটিতে ক্ষমতায় বসতে পারেনি। তাই আরএনকে ঠেকাতে বামপন্থীদের জোট এনপিই ও মাখোঁর জোট টুগেদার অ্যালায়েন্সের মধ্যে আপস হয়। আরএনের বিরুদ্ধে পড়া ভোটগুলো যেন একজনই পান, সে জন্য এই দুই জোট মিলে দুই শতাধিক প্রার্থীকে ভোট থেকে সরিয়ে দেন। বাম ও মধ্যপন্থীদের এই কৌশলই কাজে দিয়েছে।
বুথফেরত জরিপের ফল আসার পর বাম জোটের অন্যতম শরিক দল সোশ্যালিস্ট পার্টির নেতা অলিভিয়ের ফাউরে বলেছেন, ‘ফ্রান্স বলেছে, ন্যাশনাল র্যালিকে ক্ষমতা দেওয়া হবে না। এখানে নিউ পপুলার ফ্রন্টের জয় হয়েছে।’
পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে মাখোঁর পক্ষের নেতা ও ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী গ্যাব্রিয়েল আতাল পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামীকাল প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন তিনি।
আর ন্যাশনাল র্যালির নেতা মারিন লো পেন বলেছেন, তাঁর দলের জয় শুধু বিলম্বিত করা হয়েছে। আজকের এই ফলের মধ্যে তিনি আগামী দিনের বিজয়ের বীজ দেখতে পাচ্ছেন।
ন্যাশনাল র্যালি জয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী হতেন দলটির নেতা জরদান বারদেলা। বুথফেরত জরিপের ফল আসার পর বাম ও মধ্যপন্থীদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘অস্বাভাবিক’ ও ‘মর্যাদাহীন’ জোট ফ্রান্সের জনগণকে ‘ন্যাশনাল র্যালির বিজয়’ থেকে বঞ্চিত করেছে।
প্রেসিডেন্ট মাখোঁ গত ৯ জুন আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পর সোশ্যালিস্ট (সমাজতান্ত্রিক), পরিবেশবাদী, কমিউনিস্ট ও কট্টর বামপন্থী দল ফ্রান্স আনবোয়েড পার্টি (এলএফআই) মিলে নতুন এই জোট গঠন করে। এই দলগুলো আগে একে অপরের সমালোচনা করত। দলগুলোর আদর্শ ও কর্মপদ্ধতির মধ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। তবে কট্টর ডানপন্থীদের সরকার গঠনের সুযোগ না দেওয়ার জন্য দলগুলো মিলে এই নির্বাচনী জোট গঠন করে।
এই জোটের পক্ষ থেকে বর্তমান সরকারের পাশ করা পেনশন ও অভিবাসন বিষয়ক সংশোধিত আইন বাতিলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের ব্যবস্থাপনা এবং ভিসা আবেদনের বন্দোবস্ত করার জন্য একটি সহায়তাকারী সংস্থা গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া জীবনযাপনের ব্যয় মেটাতে জনগণকে যে কষ্ট করতে হচ্ছে, তা লাঘবে মৌলিক পণ্যগুলোর দাম সর্বোচ্চ কত হতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া এবং ন্যূনতম বেতন বাড়ানোরও ঘোষণা দিয়েছে বামপন্থীদের এই জোট।