রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তোলা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে তোলা

সুইজারল্যান্ডে সম্মেলন নিয়ে কী ভাবছেন রণক্লান্ত ইউক্রেনের সেনা ও সাধারণ মানুষ

সুইজারল্যান্ডে এ সপ্তাহের শেষে ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ সম্মেলন নিয়ে বেশ উচ্চাশা পোষণ করছেন। ভালো কিছুর প্রত্যাশা তাঁর। তবে ইউক্রেনের সম্মুখসারির সেনা ও কিয়েভের যুদ্ধক্লান্ত বাসিন্দাদের মতে, সম্মেলন থেকে বড় কোনো অর্জনের সম্ভাবনা কার্যত শূন্য।

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছরের বেশি সময় পেরিয়েছে। এ সময়ে এসে সুইজারল্যান্ডের সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে প্রায় ৯০টি দেশ ও বৈশ্বিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এমন এক সময়ে তাঁরা বসছেন, যখন ইউক্রেনের দোনেৎস্কে রুশ বাহিনীর সঙ্গে জোরালো লড়াই চলছে।

ওই অঞ্চলে যুদ্ধরত একটি ট্যাংক ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার সের্গেই। সম্মেলনের ভবিষ্যত নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নন ৩৬ বছর বয়সী এ যোদ্ধা। তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভবত একটি বিলাসী সম্মেলন হতে যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, ভালো অস্ত্র পরিস্থিতি বদলাতে পারে। তাই এ সম্মেলন দোনেৎস্কের পরিস্থিতির আদৌ উন্নতি করবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

২৩ বছর বয়সী দিনাইলো পেশায় ড্রোন পরিচালক। তিনি বলেন, এ জমায়েত ‘যুগান্তকারী’ কোনো পরিবর্তন আনবে না। এটা বরং প্রতীকী একটি আয়োজন হবে।

সীমিত সম্পদ থাকার পরও ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দেশটির পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলে গ্রামের পর গ্রামে রুশ বাহিনীর সামনে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। সেই সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে বাধ্যতামূলক বেসামরিক স্থানান্তর ঘোষণায় বাধ্য করেছে।

রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দা ভিক্টোরিয়া (৩৬), কাজ করেন জ্বালানিশিল্পে। বলেন, টানা যুদ্ধের কারণে তিনি বেশ অবসন্ন হয়ে পড়েছেন। বিশ্বাস করতে চান, এ সম্মেলন যুদ্ধের লাগাম টানতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

যদিও প্রত্যাশা নিয়ে নিজেরই সংশয় আছে ভিক্টোরিয়ার। তিনি বলেন, ‘ব্যক্তিজীবনে আমি বাস্তববাদী একজন মানুষ। তাই এটা নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা করছি না।’

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়ায় আটক ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের নিজ দেশে ফেরানোর বিষয়টি সম্মেলনে অগ্রাধিকার পাবে।

এই ইস্যুটা ৪০ বছরের লিদিয়া রাইবাসের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নিজের ভাই এখন যুদ্ধবন্দী। তাই সুইজারল্যান্ডের আলোচনার দিকে তাঁর মনোযোগ থাকবে। লিদিয়া বলেন, ‘আমার ভাই বন্দী। তাই এ ইস্যুটা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।’

২২ বছরের আলেকজান্দ্রা পেশায় তথ্য নিরাপত্তাবিশেষজ্ঞ। সুইজারল্যান্ডের সম্মেলন নিয়ে তাঁর মনোভাব অনেকটাই স্পষ্ট। বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নৃশংস সামরিক উপায়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে। এ সম্মেলন মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার করবে। তবে শেষ পর্যন্ত রণক্ষেত্রে ফয়সালা হবে।’

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির শান্তি ফর্মুলার ভিত্তিতেই সুইজারল্যান্ড আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করছে। ইউক্রেনের স্বীকৃত ভূখণ্ড থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার, মস্কোর তরফে আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে রুশ কর্মকর্তাদের বিচার চান ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।