তৃতীয় দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে রাশিয়া গেছেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়া সফরে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে তাঁর এ সফরে নাখোশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা মিত্ররা। এ সফরকে ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
দুই দিনের সফরে গত সোমবার মস্কো পৌঁছান মোদি। তৃতীয় দফায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফর হিসেবে রাশিয়াকে বেছে নিয়েছেন তিনি। সেখানে মোদিকে ‘বন্ধু’ সম্বোধন করে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গতকাল মঙ্গলবার ক্রেমলিনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার কথা দুই নেতার।
সফরের প্রথম দিন মস্কোর বাইরে নভো-ওগারিয়োভোতে পুতিনের বাসভবনে তাঁর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন মোদি। আর ওই দিনই সেখান থেকে ৯০০ কিলোমিটার দূরে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় রাশিয়া। এতে কমপক্ষে ৪১ জন নিহত হয়। আহত হয় প্রায় ২০০ জন।
প্রায় আড়াই বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর এই প্রথম মস্কো সফর করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, সফরের প্রথম দিন পুতিন ও মোদি পরস্পরকে আলিঙ্গন করছেন, চা পানের সময় কথা বলছেন, বৈদ্যুতিন গাড়িতে চড়ছেন এবং ঘোড়ার আস্তাবল পরিদর্শন করছেন।
রাশিয়ার প্রাণঘাতী হামলার প্রতি ইঙ্গিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশের নেতাকে এমন একটি দিনে মস্কোতে বিশ্বের সবচেয়ে নৃশংস অপরাধীকে আলিঙ্গন করতে দেখাটা অত্যন্ত হতাশার এবং এটি শান্তি প্রচেষ্টার প্রতি বিধ্বংসী আঘাত।’
গতকাল মস্কোয় প্রবাসী ভারতীয়দের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ হামলার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি মোদি। তবে ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্কের প্রশংসা করেন। ভ্রমণ ও ব্যবসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে ইয়েকাতেরিনবার্গ ও কাজানে দুটি নতুন কনস্যুলেট খোলারও ঘোষণা দেন তিনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়ার তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে হলেও সেটা কোনো বিষয় নয়, ভারত ও রাশিয়ার সম্পর্ক সব সময় ঊর্ধ্বমুখী। এই সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।’
এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের মিত্র মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ধরে রাখার সূক্ষ্ম পথে হাঁটছে নয়াদিল্লি। ভারতকে ছাড়মূল্যে তেল এবং অস্ত্র সরবরাহ করা গুরুত্বপূর্ণ দেশ রাশিয়া। তবে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এবং চীনের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠতার ফলে সময়ের পরীক্ষিত এই মিত্রের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বেইজিংয়ের প্রভাব কমাতে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি রাশিয়া থেকে দেশটিকে দূরত্ব বজায় রাখতে চাপ দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র। গত সোমবার সাংবাদিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘মোদি কী নিয়ে আলাপ করেছেন, সেটা জানতে তিনি প্রকাশ্যে কী মন্তব্য করেন, আমি সেটার ওপর নজর রাখব। তবে আমি যেটা বলতে চাই, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি ভারতকে আমরা স্পষ্ট করেছি।’
মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়ে মিলার বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় তাঁর এ বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত যে ইউক্রেন সংঘাতের যেকোনো সমাধানের ক্ষেত্রেই জাতিসংঘের সনদ এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতার প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সরাসরি নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে ভারত। এ ছাড়া জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও ভোটদানে বিরত থেকেছে নয়াদিল্লি।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের প্রধান শিশু হাসপাতালে গত সোমবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় হাসপাতাল ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রুশ হামলায় হতাহতের ঘটনায় ইউক্রেন সরকার গতকাল দেশটিতে এক দিনের শোক দিবস ঘোষণা করেছে। মস্কো বারবার ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করে আসছে।