এই গ্রীষ্মের দাবদাহে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ভয়াবহ দাবানল। গতকাল রোববার পর্যন্ত দাবানল নেভার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি; বরং এ মহাদেশের কিছু এলাকায় আগামী সপ্তাহের শুরুতে নতুন তাপমাত্রার রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে। ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেন ও গ্রিসের অগ্নিনির্বাপণের (ফায়ার সার্ভিস) কর্মীরা দাবানল নেভাতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাজার হাজার হেক্টর এলাকা ধ্বংস হয়েছে দাবানলে। এ সপ্তাহের শুরু থেকে সৃষ্ট দাবানলে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মী মারা গেছেন। এ ছাড়া দাবানলে মারা গেছে কয়েক শ মানুষ। খবর এএফপির
কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপ ঘিরে এটি দ্বিতীয় দাবদাহের ঘটনা। বিজ্ঞানীরা এর জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন। তাঁদের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আরও ঘন ঘন এ ধরনের চরম আবহাওয়ার মুখোমুখি হতে হবে।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিম গিরোন্ডে অঞ্চলের উপকূলীয় শহর আরকাচনে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দাবানল নেভাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গত মঙ্গলবার সেখানে সৃষ্ট দাবানল এখন পর্যন্ত ১০ হাজার হেক্টর এলাকা গ্রাস করেছে। পাঁচটি উড়োজাহাজ ও ফায়ার সার্ভিসের ১ হাজার ২০০ কর্মী সেখানে দাবানল নেভাতে কাজ করছেন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল অলিভিয়ার চ্যাভাতে বলেন, এটা বিশাল কাজ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীর মুখপাত্র আরনাউড মেন্দোসে বলেন, গত শনিবার আরও কয়েক শ মানুষকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গেরাল্ড ডার্মানিন বলেন, ‘ফ্রান্সে আরও কয়েকটি স্থানে দাবানল রয়েছে। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করছেন।’
মঙ্গলবার দাবানল থেকে বাঁচতে অস্থায়ী ক্যাম্পে ১৪ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। গতকাল ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলে কিছু এলাকায় তাপমাত্রা ওঠে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা উঠেছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সোমবার সেখানে নতুন করে তাপমাত্রার রেকর্ড হতে পারে।
এদিকে পর্তুগালের আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সেখানে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে, যা আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দেশটিতে জুলাই মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। পর্তুগালের উত্তরাঞ্চলেও দাবানল সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা প্রধান আন্দ্রে ফার্নান্দেস সতর্ক করে বলেন, নতুন করে দাবানল সৃষ্টির ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে দেশটির গণমাধ্যম বলছে, ইতিমধ্যে দেশটিতে ২০টি স্থানে দাবানল রয়েছে। ফার্নান্দেস বলেন, এটা চরম সতর্কতার একটি সপ্তাহ। ইতিমধ্যে এ সপ্তাহে দুজন মারা গেছে ও ৬০ জনের বেশি আহত হয়েছে। ১৫ হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। লিসবন সরকার সপ্তাহব্যাপী জরুরি অবস্থা বাড়ানো হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছে।
স্পেনের জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা দেশজুড়ে বিভিন্ন স্তরের সতর্কতা বজায় রেখেছে। দেশটির কিছু কিছু অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক ডজন এলাকায় দাবানলের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাড়ে তিন হাজার হেক্টর এলাকা ধ্বংস হয়েছে তাতে।
দাবানল নেভাতে গিয়ে বেশ কয়েকজনের প্রাণ গেছে। পর্তুগালে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা গেছেন পাইলট। এ ছাড়া গ্রিসে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন আরও দুজন।
গ্রিসে ক্রিট দ্বীপে সৃষ্ট দাবানল নেভাতে কাজ করছে দেশটির ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। দাবানল সৃষ্টি হয়েছে মরক্কোর উত্তরাঞ্চলে পাহাড়ি এলাকায়। সেখানে একজন নিহত হয়েছে এবং এক হাজারের বেশি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্ক ও ক্রোয়েশিয়ার অ্যাড্রিয়াটিক উপকূলের কিছু এলাকাও দাবানলের সঙ্গে লড়াই করছে। ইতালি সরকার পো উপত্যকায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
এদিকে গরমের কারণে যুক্তরাজ্যে জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে নাকাল যুক্তরাজ্যের জনজীবন। আগামী সপ্তাহে ইংল্যান্ডের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যাবে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। দাবদাহ বাড়তে পারে যুক্তরাজ্যের অন্যান্য এলাকায়ও। এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যু এড়াতে সাধারণ কিছু উপায় মেনে চলে নিরাপদে থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
মেয়র সাদিক খান লন্ডনবাসীদের শুধু অতিপ্রয়োজনে গণপরিবহন ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। জাতীয় ট্রেন অপারেটররাও যাত্রীদের ভ্রমণ এড়াতে সতর্ক করেছেন।