দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র–ড্রোন তৈরি করছে ইউক্রেন

রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর কিয়েভকে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণব্যবস্থা হিমার্স সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্র
ফাইল ছবি: এএফপি

ইউক্রেন থেকে একঝাঁক ড্রোন রাশিয়ার সাতটি অঞ্চলের দিকে উড়ে যাচ্ছিল। গত ২৯ আগস্ট দিনের শুরুতে চালানো হয় এ হামলা। অনেকগুলো ড্রোনই ভূপাতিত করা হয়। তবে কয়েকটি ড্রোন ফাঁক গলে ঠিকই এগিয়ে যায়।

কয়েকটি ড্রোন ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে রাশিয়ার পেসকভ বিমানঘাঁটিতে পৌঁছে যায়। ড্রোনের আঘাতে দুটি সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ ধ্বংস হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আরও দুটি।

প্রায় ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে এটা ছিল নাটকীয় মোড়। যুদ্ধকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়ার ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টারই প্রমাণ। এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে উড়ুক্কু ও সামুদ্রিক ড্রোন, ‘রহস্যজনক’ নতুন ক্ষেপণাস্ত্র এবং গুপ্তঘাতক গোষ্ঠী। লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে রাশিয়ার বিমানঘাঁটি, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং জাহাজ।

দফায় দফায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হচ্ছে ইউক্রেন। তাই ছোট আকারের হলেও এ ধরনের পাল্টা হামলা ইউক্রেনীয়দের মনোবল বাড়াচ্ছে; বিশেষ করে চলমান পাল্টা আক্রমণে দক্ষিণে লক্ষ্য অর্জনে এখনো হিমশিম খেতে হচ্ছে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে।

ড্রোন-ক্ষেপণাস্ত্র

যুদ্ধকে রাশিয়ার ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উদ্বিগ্ন নন। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, যুদ্ধ রাশিয়ার ভূখণ্ডে ফিরে আসছে—এর প্রতীকী কেন্দ্র ও সামরিক ঘাঁটিতে। এটি একটি অনিবার্য, স্বাভাবিক এবং একেবারেই ন্যায্য প্রক্রিয়া।

যুদ্ধের সম্মুখসারি থেকে অনেক দূরে চালানো এসব হামলা ইউক্রেনের ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রদর্শনের সক্ষমতারই প্রমাণ। তবে এই শক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃতভাবেই পশ্চিমা যুদ্ধ সরঞ্জামের ওপর নির্ভর না করে স্থানীয় প্রযুক্তি ও কারিগরি সক্ষমতা কাজে লাগানো হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেকসি রেজনিকভ বারবার পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহকারীদের আশ্বস্ত করে আসছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে তাদের দেওয়া অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না। কারণ, এটা করা হলে অস্ত্র সরবরাহকারী দেশগুলোকে যুদ্ধের পক্ষ হিসেবে বিবেচনা করবে মস্কো।

এর পরিবর্তে ইউক্রেন নিজেদের সমরাস্ত্রশিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিচ্ছে। এসব কারখানা ১৫৫এমএম কামানের গোলা থেকে শুরু করে দূরপাল্লার ড্রোন সরবরাহ করছে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিরও ইঙ্গিত মিলেছে।

নতুন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির ইঙ্গিত দিয়েছেন ইউক্রেনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা। ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের সেক্রেটারি ওলেকসি দানিলভ গত সপ্তাহে সম্ভাব্য ওই ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান দৃশ্যপটে। পরীক্ষা সফল হয়েছে, ব্যবহার কার্যকর।’

স্ট্র্যাটেজিক ইন্ডাস্ট্রিজ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অভিনন্দন বার্তায়ও একই ধরনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দূরপাল্লার অস্ত্রের সফল ব্যবহার; ৭০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত!’

সামুদ্রিক ড্রোনে আগ্রহ

সামুদ্রিক ড্রোন তৈরিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে ইউক্রেন। সম্প্রতি সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়া এ ধরনের একটি ড্রোন ৪০০ কেজি বিস্ফোরক বহন করতে পারে। এটি কয়েক শ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বড় ধরনের জাহাজে হামলা চালাতে সক্ষম।

আগস্টের শুরুর দিকে কার্চ প্রণালিতে গ্যাস ও রাসায়নিক বহনকারী রাশিয়ার এসআইজি ট্যাংকারে আঘাত হানে এ ধরনের একটি ড্রোন। এতে জাহাজটি ডুবে না গেলেও ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। নভোসিব্রিস্ক বন্দরে রাশিয়ার নৌবাহিনীর একটি জাহাজে আরেকটি ড্রোন আঘাত হানে।

অস্ট্রেলিয়ার সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক জেনারেল মাইক রায়ান লিখেছেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই নিজেদের নৌবহর গড়ে তোলার কোনো সম্ভাবনা ইউক্রেনের নেই বলেই মনে হচ্ছে। তবে ড্রোন সক্ষমতা বাড়িয়েছে দেশটি। যদিও রাশিয়ার ভাসমান জাহাজগুলো ডুবিয়ে দিতে ও ক্ষতিগ্রস্ত করতে এসব ড্রোন বানানো হয়েছে, তবে সাগরে জাহাজ ভাসানোর ক্ষেত্রে দেশটির ওপর মানসিক চাপ তৈরিও এর উদ্দেশ্য।’

ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ গোলা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

এই প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে সাঁজোয়া যান বিধ্বংসী বিতর্কিত ডিপ্লেটেড ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ গোলা সরবরাহ করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ধরনের একটি নথি দেখার সুযোগ পেয়েছে রয়টার্স। আলাদাভাবে রয়টার্সকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা।

ইউক্রেনের জন্য আগামী সপ্তাহে নতুন সামরিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করবে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। এই প্যাকেজে ট্যাংকবিধ্বংসী এ ধরনের গোলাও থাকছে। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আব্রামস ট্যাংক থেকে এসব গোলা নিক্ষেপ করা যায় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ ট্যাংক পাবে ইউক্রেন।