পূর্বসূরি নেতাদের বিশৃঙ্খল মেয়াদ শেষে দলের নতুন নেতা হিসেবে আবির্ভাব ঘটেছিল ঋষি সুনাকের। তখন যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি (টোরি) আশা করেছিল, সুনাক দল ও দেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন। কিন্তু সে আশা পূরণ হয়নি। এর বদলে দলটিকে নির্বাচনী ভরাডুবির শিকার হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছেন তিনি। ১৪ বছর ধরে দেশটিতে ক্ষমতায় রয়েছে দলটি।
নিজস্ব করপরিকল্পনা নিয়ে অসন্তোষের জেরে মাত্র ৪৯ দিনের প্রধানমন্ত্রিত্ব শেষে লিজ ট্রাসের স্থলে সুনাককে ক্ষমতায় বসান কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতারা। সেটি ছিল ২০২২ সালের অক্টোবরের ঘটনা। পরে দেশের টালমাটাল অর্থনীতিতে একদিক থেকে স্থিতিশীলতা আনতেও সক্ষম হন ৪৪ বছর বয়সী ধনাঢ্য সুনাক। তবে দলের অভ্যন্তরে চলা তিক্ত বিবাদের অবসান ঘটানো কিংবা বিরোধী লেবার পার্টির প্রতি দেশবাসীর অব্যাহত সমর্থনে লাগাম টানতে ব্যর্থ হন।
কিছু অর্থনৈতিক সুখবরে ক্ষমতাসীন দল যখন তাদের আশা টিকিয়ে রাখার ভেলা খুঁজে পাচ্ছিল, ঠিক তখন, গত মে মাসের শেষ দিকে সুনাক ৪ জুলাই (আজ বৃহস্পতিবার) আগাম নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন। অথচ ২০২৫ সালের প্রথম দিকের আগে তাঁকে ভোটারদের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক আশা করেছিলেন, তাঁর এ অপ্রত্যাশিত ঘোষণা ডানপন্থী ‘রিফর্ম ইউকে’ দলকে ঘোরের মধ্যে ফেলে দেবে। সেই সঙ্গে জনসমর্থনে লেবার দলের ২০ পয়েন্টে এগিয়ে থাকাও স্বল্প সময়ের নির্বাচনী প্রচারে হ্রাস পাবে। কিন্তু এ ঘোষণা তাঁর নির্বাচনী প্রচারশিবিরকে ঠেলে দিয়েছে এক বিপর্যয় থেকে আরেক বিপর্যয়ে।
২০২২ সালে ক্ষমতায় আসার পর দেশের টালমাটাল অর্থনীতিতে একদিক থেকে স্থিতিশীলতা আনতেও সক্ষম হন ৪৪ বছর বয়সী ধনাঢ্য সুনাক। তবে দলের অভ্যন্তরে চলা তিক্ত বিবাদের অবসান ঘটানো কিংবা বিরোধী লেবার পার্টির প্রতি দেশবাসীর অব্যাহত সমর্থনে লাগাম টানতে ব্যর্থ হন।
এখন পর্যন্ত সুনাকের সিদ্ধান্তের সবচেয়ে বড় ক্ষতির দিকটি ছিল, ফ্রান্সে ডি–ডের স্মরণ (৬ জুন) অনুষ্ঠান থেকে তড়িঘড়ি চলে যাওয়ার বিষয়টি। ওই ঘটনায় যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী ভোটারদের মধ্যে ক্ষোভ ও নিজেদের একঘরে হয়ে পড়ার অনুভূতির সঞ্চার হয়। অথচ নির্বাচনে জিততে এমন ভোটারের সমর্থন তাঁর জন্য একান্ত অপরিহার্য।
ক্ষুব্ধ ডানপন্থী এই ভোটাররা এখন ব্রেক্সিটপন্থী রিফর্ম নেতা নাইজেল ফারাজকে ভোট দিতে মুখিয়ে আছেন।
আগাম নির্বাচন ডাকার আগেই এর তারিখ নিয়ে কথিত বাজি ধরাকে কেন্দ্র করে কনজারভেটিভ পার্টির কিছু প্রার্থী ও দলের প্রচারশিবিরের প্রধান তদন্তের আওতায় আসার পর এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়েছে সুনাককে।
এসব ঘটনার সবই ঋষি সুনাককে ক্রমেই আরও বেশি হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিতে পরিণত করেছে। আগাম নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রচারের শুরুর দিকে বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। তবে এখন এ কথার ওপর তিনি জোর দিচ্ছেন যে, ‘নির্বাচনী ফলাফল কোনো জানা কথা নয়।’
উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর কনজারভেটিভ পার্টি ঐতিহাসিক পরাজয়ের পথে। আজ যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচন ঘিরে নানা পূর্বাভাস বলছে, বামঘেঁষা কিয়ার স্টারমারের বিরোধী লেবার পার্টি পার্লামেন্টে সম্ভাব্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পথে রয়েছে। কনজারভেটিভ নেতা ঋষি সুনাক আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তাঁর দলের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বৃষ্টির মধ্যে একা দাঁড়িয়ে ভিজছিলেন তিনি। তাঁর কিছু সমালোচক বলছিলেন, সবকিছু শেষ করার জন্য আপাতদৃষ্টে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
কনজারভেটিভ পার্টির সেই সমাপ্তি কাছেই মনে হচ্ছে। গত মাসে কনজারভেটিভ–ঘেঁষা যুক্তরাজ্যের টেলিগ্রাফ পত্রিকা এক জরিপ চালায়। তাতে আভাস দেওয়া হয়, টোরি দলের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। হাউস অব কমন্সে বর্তমানে যাদের ৩৬৫ আসন রয়েছে, সেখানে ক্ষমতাসীন দল হয়েও তারা এবার মাত্র ৫৩ আসন পাবে। পার্লামেন্টের ৬৫০ আসনের মধ্যে লেবার পার্টি পাবে ৫১৬ আসন। ঋষি সুনাক তাঁর নিজের আসনেও হেরে যেতে পারেন। তাঁরই মতো বর্তমান মন্ত্রিসভার দুই–তৃতীয়াংশ নেতা নিজ আসন হারাবেন। কিছু পূর্বাভাসে এ–ও বলা হয়, কনজারভেটিভ পার্টি বৃহত্তম দলের স্থানও হারাবে। মধ্যপন্থী লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা তাদের চেয়ে বেশি আসন পাবে।