প্রধানমন্ত্রী পদে আলোচনায় আবারও বরিস জনসন

যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন
ফাইল ছবি

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা লিজ ট্রাসের আকস্মিক পদত্যাগের ঘোষণার পর তাঁর উত্তরসূরি কে হবেন, এ প্রশ্ন এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে। এখন পর্যন্ত শুধু সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মরডান্ট এ লড়াইয়ে নামার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গন ও সংবাদমাধ্যমে আলোচনায় এগিয়ে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। খবর বিবিসি ও আল–জাজিরার।

তবে যিনিই ওই পদের প্রার্থী হন না কেন, তাঁকে ৩৫৭ জন কনজারভেটিভ (টোরি) এমপির মধ্যে ন্যূনতম ১০০ জনের সমর্থন পেতে হবে। প্রার্থী একজন হলে ভোটাভুটির প্রয়োজন হবে না।  ২৮ অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনপ্রক্রিয়া শেষ করার কথা রয়েছে।

জনসন–সুনাকের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের মতো প্রভাবশালী প্রার্থীদের নাম। এর আগে জনসনের উত্তরসূরি হওয়ার লড়াই থেকে ছিটকে পড়লেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টোরি এমপির সমর্থন পান এ তিনজনই।

বরিস জনসনের পদত্যাগের পর গত সেপ্টেম্বরে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ট্রাস। করোনাকালে লকডাউনের মধ্যে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পার্টির আয়োজন থেকে শুরু করে বহু বিতর্কের জেরে পদত্যাগ করেছিলেন জনসন। তবে এখনো পার্লামেন্ট ও দলে তাঁর অনেক মিত্র আছেন। তাঁরাই এখন তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদে ফেরাতে চাইছেন।

এ বিষয়ে জনসনের দীর্ঘদিনের বন্ধু–সমর্থক নাদিন ডরিস বলেন, ‘বরিস জনসনের আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত। কারণ, ২০১৯ সালের নির্বাচনে তিনি জনগণের ম্যান্ডেট (সমর্থন) পেয়েছিলেন।’

২০০৮ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত জনসন লন্ডনের মেয়র ছিলেন। পরে দুই বছরের জন্য যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা নির্বাচিত হন জনসন। পরদিন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। জনসন দুটি পদ থেকেই পদত্যাগ করেন গত ৬ সেপ্টেম্বর।

প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে বৃহস্পতিবার দুপুরে পদত্যাগের ঘোষণা দেন লিজ ট্রাস। লন্ডন, যুক্তরাজ্য

২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনসন। ওই সময় থেরেসা মের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। কিন্তু বিতর্ক–সমালোচনা তাঁর পিছু ছাড়েনি। মহামারিতে লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে পার্টির আয়োজন ও জরিমানা প্রদান ছাড়াও নিজ দলের এমপি ক্রিস পিনচারের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে না নেওয়ার গুরুতর অভিযোগ ছিল জনসনের বিরুদ্ধে। ছিল ভঙ্গুর অর্থনীতির গতি ফেরাতে না পারা ও জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে না পারার অভিযোগও।

যিনিই ক্ষমতায় আসুন, আগাম নির্বাচন কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি। ওই সময় যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

মূলত এসব কারণে জনসনের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। সরকারের একের পর এক মন্ত্রী ও সহযোগী পদত্যাগ করে চাপে ফেলেন তাঁকে। শেষ পর্যন্ত কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে বাধ্য হন জনসন। এবার তিনিই আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আলোচনায়।  

আলোচনায় যত নাম

জনসনের সরকারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন ঋষি সুনাক। পরে পদত্যাগ করে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে শামিল হন। শেষ পর্যন্ত ট্রাসের কাছে হেরে যান। ট্রাসের কর পরিকল্পনা অর্থনীতি ধ্বংস করবে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন রিচমন্ডের নর্থ ইয়র্কশায়ারের এমপি সুনাক। এখন ট্রাসের উত্তরসূরি হিসেবে আলোচনায় রয়েছে সুনাকের নামও।

করোনা মহামারির সময় যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি সচল রাখতে সচেষ্ট ছিলেন সুনাক। কিন্তু করসুবিধা নেওয়ায় স্ত্রীকে নিয়ে বিতর্ক উঠলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় তাঁর। কিছুদিন পর লকডাউনের বিধিনিষেধ ভেঙে নিজেও জরিমানা গোনেন। ট্রাসের উত্তরসূরি হতে ইতিমধ্যে টোরি এমপি অ্যাঞ্জেলা রিচার্ডসন সুনাকের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গত ছয় সপ্তাহে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে সুনাকের যোগ্যতার বিষয়টা আরও স্পষ্ট হয়েছে।

জনসন–সুনাকের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছে সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেনি মরডান্ট, বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস, সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্রেভারম্যানের মতো প্রভাবশালী প্রার্থীদের নাম। এর আগে জনসনের উত্তরসূরি হওয়ার লড়াই থেকে ছিটকে পড়লেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক টোরি এমপির সমর্থন পান এ তিনজনই।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টির এমপি কেমি বেডেনখের নামও। তবে যিনিই ক্ষমতায় আসুন, আগাম নির্বাচন কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটলে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকবেন তিনি। ওই সময় যুক্তরাজ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।