আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে একটি স্কুলের বাইরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে তিন শিশু আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে ডাবলিনের পারনেল স্কয়ার ইস্ট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর ডাবলিনে তুমুল বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। যানবাহনে আগুন ও দোকান লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে ডাবলিনে এমন বড় আকারের বিক্ষোভ দেখা যায়নি। বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে শহরের রাস্তায় রায়ট পুলিশ নামানো হয়েছে। এই পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের। তাঁদের অনেকে আতশবাজি পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। রাজধানীর ও’কনেল সেতুর কাছে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কয়েকটি যানবাহন থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে।
ছুরিকাঘাতে আহত তিন শিশুর মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর। তাদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে আহত আরেক নারী ও সন্দেহভাজন হামলাকারীকেও। তাঁর জাতীয়তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ‘ভুয়া তথ্যে’ কান না দেওয়ার জন্য সবাইকে সতর্ক করেছেন আয়ারল্যান্ডের পুলিশপ্রধান ড্রিউ হ্যারিস।
আয়ারল্যান্ডে আবাসনের তীব্র সংকট চলছে। সাধারণ মানুষের বসবাসের জন্য দেশটিতে লাখো বাসাবাড়ির অভাব রয়েছে বলে অনুমান আইরিশ সরকারের। এরই মধ্যে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে আয়ারল্যান্ডের নাগরিকদের মধ্যে। উগ্র ডানপন্থীরা আবার অভিবাসনবিরোধী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, ‘আয়ারল্যান্ডের সব জায়গা পূর্ণ হয়ে গেছে।’
ডাবলিনে বিক্ষোভ ও সহিংসতা নিয়ে আয়ারল্যান্ডের বিচারবিষয়ক মন্ত্রী হেলেন ম্যাকএন্টি বলেছেন, শহরে যে পরিস্থিতি দেখা গেছে এবং পুলিশের ওপর যে হামলা হয়েছে, তা সহ্য করা হবে না। এই কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে বৃহস্পতিবারের ছুরিকাঘাতের ঘটনা সন্ত্রাসবাদ-সংশ্লিষ্ট বলে মনে করছে না আয়ারল্যান্ড পুলিশ। পুলিশের সুপারিনটেনডেন্ট লিয়াম জেরাটি বলেন, পাঁচ বছর বয়সী একটি মেয়ে শিশুর আঘাত গুরুতর। তার তুলনায় কম আহত হয়েছে ছয় বছর বয়সী আরেক মেয়ে শিশু ও পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলে শিশু। তাকে চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় আরেক নারীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজন হামলাকারীর বয়স পঞ্চাশের কোঠায়। তিনিও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার সময় সেখানে ছিলেন সিওভান কেয়ারনি নামের এক নারী। তিনি বলেন, রাস্তার অপর পাশ থেকে তিনি এক ব্যক্তিকে হামলা চালাতে দেখেন। তখন তিনি সাহায্য করার জন্য রাস্তা পেরিয়ে সেখানে যান। এ সময় এক ব্যক্তি হামলাকারীর কাছ থেকে ছুরিটি ছিনিয়ে নেন। আরেকজন সেটি দূরে সরিয়ে দেন। এরপর হামলাকারীকে আটক করেন সেখানে থাকা লোকজন।
হামলার ঘটনাটি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আইরিশ লেবার পার্টির সদস্য ও স্থানীয় আইনপ্রণেতা আওডান ও রিওরডাইন। তিনি বলেন, ‘আশা করছি আহতদের আঘাত অতটাও গুরুতর নয়। তবে সংশ্লিষ্ট সবার ওপর এই হামলা প্রভাব ফেলবে।’