১৯৯৮ সালে ভুটানে প্রিন্স চার্লস
১৯৯৮ সালে ভুটানে প্রিন্স চার্লস

অস্ট্রেলিয়ায় সৈকতে চার্লসকে জাপটে ধরে চুমু খেয়েছিলেন এক মডেল

যুক্তরাজ্যের রাজা চার্লস গত শুক্রবার ছয় দিনের সফরে অস্ট্রেলিয়া গেছেন। লাজুক এক কিশোর হিসেবে এই দেশে তিনি প্রথম গিয়েছিলেন ১৯৬৬ সালে। এখানে কিছু সময় তিনি পড়াশোনা করেছেন। এখানেই আছে তাঁর সমুদ্রতীরে স্মরণীয় এক চুমু খাওয়ার ঘটনা। এ ছাড়া একবার তিনি এখানে খুব অল্পের জন্য এক গুপ্তহত্যার শিকার হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।

চার্লস এবার নিয়ে ১৭ বার অস্ট্রেলিয়ায় এলেন। তবে রাজা হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম সফর।

অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় চার্লসের সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক কিছু অজানা তথ্য।

প্রিন্স চার্লস যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, তখন তিনি ১৭ বছরের পাতলা গড়নের এক টিনটিনে কিশোর। সেখানে তাঁর স্কুল ছিল ভিক্টোরিয়া রাজ্যের নিরিবিলি এক পাহাড়ি এলাকায় টিম্বারটপ স্কুল। স্কটল্যান্ডে চার্লস যেখানে খুব অনুশাসনের মধ্যে পড়াশোনা করেছিলেন, আর এখানে এসে পেয়েছিলেন ঠিক উল্টো পরিবেশ। স্কুলের দুটি সাময়িকীতে তিনি ফায়ারউড তৈরির জন্য কাঠ টুকরো টুকরো করেছেন। এমনকি স্কুলের কাছেই জঙ্গলে গিকি হাইক করেছিলেন, যা ছিল বেশ কষ্টদায়ক।

পরে চার্লস বলেছিলেন, ‘আমি যখন সেখানে ছিলাম, আমার গুরুগম্ভীর ভাব ছুটে গিয়েছিল।’ তবে সেই সময়টা তাঁর জীবনের সেরা ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

‘মিডিয়া মোগল’ রুপার্ট মারডকও ছিলেন টিম্বারটপের শিক্ষার্থী। আর সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সেখানে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।

অবিবাহিত চার্লস ১৯৭৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে বেড়াতে গিয়ে স্বল্প বসনে ঢেউয়ের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে উঠে সমুদ্রের তীরের দিকে এগোতেই বিকিনি পরা এক মডেল এসে জাপটে ধরে তাঁর গালে চুমু খান।

আইকনিক সেই ছবি চার্লসকে গুরুগম্ভীর খ্যাতি থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেছিল। বলা হয়, এই ঘটনা বাকিংহাম প্যালেস থেকে পরিকল্পনা করেই মঞ্চস্থ করা হয়ে থাকতে পারে।

অথচ এর আগে সিডনির বন্ডি সৈকতে সাগরে নামার জন্য ওয়েটস্যুট পরতে হবে বলে, তিনি সাগরেই নামেননি। তিনি বলেছিলেন, রক্ত হিম হয়ে যাওয়ার মতো ঠান্ডা ছিল।

সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন মা। ১৯৭৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে মিউজিক টেলিভিশনকে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন চার্লস। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন তারকা মোলি মেলড্রুম। সেখানে তিনি চার্লসকে বলেছিলেন, ‘আমি লন্ডনে আপনার মাকে দেখেছি।’ অথচ নিয়ম অনুযায়ী চার্লসের মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ‘মাম (মা) শব্দ বলা উচিত ছিল না। সম্বোধন হিসেবে রাজকীয় কোনো শব্দ ব্যবহার করতে হতো। সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর প্রশ্ন মোটেও পছন্দ হয়নি চার্লসের। তিনি তাঁকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি তখন তাঁকে ম্যাজেস্টি দ্য কুইন’ বলে সম্বোধন করেছেন?

১৯৮৩ সালে ডায়ানা প্রথম রাজকীয় সফরে প্রটোকল ভেঙে বড় সন্তান উইলিয়ামকে নিয়ে গিয়েছিলেন

১৯৮৩ সালে চার্লস স্ত্রী ডায়ানাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছিলেন। সে সময় সিডনি অপেরা হাউসে ‘জনগণের প্রিন্সেস’কে দেখতে ভক্তরা ভিড় করেছিলেন। এটি ছিল এই দম্পতির প্রথম রাজকীয় সফর। কিন্তু ডায়ানা সেই সময় প্রটোকল ভেঙে বড় সন্তান উইলিয়ামকে নিয়ে গিয়েছিলেন।

সেই সফরে সিডনির ওয়েন্টওয়ার্থ হোটেলের ডান্সফ্লোরে পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরে নেচেছিলেন ডায়ানা। সেই নাচের দৃশ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে দ্য ক্রাইন নামের অনুষ্ঠানে এমন একটি দৃশ্য রাখা হয়েছে।

১৯৮৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার আয়ার্স রকে প্রিন্স চার্লস এবং প্রিন্সেস ডায়ানা

অল্পের জন্য হত্যাকারীর হাত থেকে রক্ষা পান চার্লস। ১৯৯৪ সালে সিডনিতে বন্দরের কাছে জনাকীর্ণ এক সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য চার্লস উঠতেই বিকট দুটি শব্দ হয়। সঙ্গে সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীরা ওই বন্দুকধারীকে ধরে মাটিতে নামিয়ে আনে। কিন্তু পরে এক ফুটেজে দেখা যায়, চার্লস এ ঘটনায় কোনো গা করেননি। বরং তখন তিনি নিজের শার্টের কাফলিং ঠিক করছেন।

সেই বন্দুকধারী ছিলেন ২৩ বছর বয়সী একজন মানবাধিকারকর্মী। আশ্রয়প্রার্থীদের পক্ষে সচেতনতা তৈরি করতে তিনি ফাঁকা গুলি ছুড়ে এই নকল হত্যাকাণ্ডের পরিবেশ মঞ্চস্থ করেন।