ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাজা তৃতীয় চার্লস। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন সদ্য সাবেক এই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
রাজা চার্লসের দপ্তর বাকিংহাম প্যালেস সুনাকের পদত্যাগপত্র গ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে জানায়, আজ শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক রাজার শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগপত্র জমা দেন। মহামান্য রাজা তা সানন্দে গ্রহণ করেছেন।
অন্যদিকে নিজের কার্যালয় ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের পদত্যাগের কথা নিশ্চিত করে সুনাক বলেন, ‘জনগণের প্রতি আমার প্রথম কথা, আমি দুঃখিত। সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আমি আমার কাজ করেছি। কিন্তু আপনারা স্পষ্টভাবে যুক্তরাজ্যে সরকারের পরিবর্তন চেয়েছেন। আপনাদের এই রায়ের পর আর কোনো কথা হয় না।’
কনজারভেটিভ পার্টির ঐতিহাসিক পরাজয়ের দায়ভার মাথায় নিয়ে সুনাক বলেন, ‘আমি আপনাদের (ভোটারদের) ক্ষোভ, অসন্তোষের কথা শুনতে পেয়েছি। আমি এই পরাজয়ের দায়ভার গ্রহণ করছি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে সুনাকের কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১ আসন, যা দলটির ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এখন আর মাত্র দুই আসনের ফল ঘোষণা বাকি রয়েছে।
পরাজয় মেনে নিয়ে জয়ী লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়ে সুনাক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর পদে তাঁর সাফল্য আমাদের সবার সাফল্য বলে বিবেচিত হবে। আমি তাঁর ও তাঁর পরিবারের কল্যাণ কামনা করছি। নির্বাচনী প্রচারণায় আমাদের যা–ই মতবিরোধ হোক না কেন, তিনি একজন শালীন ও জনগণবান্ধব ব্যক্তি। আমি তাঁকে সম্মান করি।’
নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কিয়ার স্টারমারের লেবার পার্টি আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত ৪১২টি আসনে জয় পেয়েছে।
নিজের অর্জনের কথা উল্লেখ করে সুনাক বলেন, ‘আমরা ইংল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য অনুযায়ী মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে এনেছি। আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাজ্যের সুনাম বাড়িয়েছি। এসব অর্জনের জন্য আমি গর্বিত। ২০ মাস আগের তুলনায় এই দেশ অনেক বেশি নিরাপদ ও শক্তিশালী।’
এশীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে সুনাক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য সম্পর্কে একটি বিস্ময়কর জিনিস হলো, আমার দাদি-দাদা সামান্য সহায়-সম্পত্তি নিয়ে এখানে আসার মাত্র দুই প্রজন্মের মধ্যে আমাদের (অভিবাসীর পরিচয়) গৌণ হয়ে পড়ে। আমি প্রধানমন্ত্রী হলাম। আমার দুই কিশোরী মেয়ে ডাউনিং স্ট্রিটে (হোলি উৎসবে) দীপাবলি জ্বালাল।’
সমর্থন ও ত্যাগ স্বীকার করায় পরিবারকে ধন্যবাদ দিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন সুনাক। এরপর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তির হাত ধরে ডাউনিং স্ট্রিটে অপেক্ষায় থাকা একটি গাড়ির দিকে এগিয়ে যান ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের প্রথম এই প্রধানমন্ত্রী।
সুনাকের পূর্বসূরি লিস ট্রাসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের মাত্র ৪৫ দিনের মাথায় পদত্যাগ করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের অক্টোবরে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হন ঋষি সুনাক। এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।