রাজনৈতিক নাটকীয়তার মধ্যে যুক্তরাজ্য। প্রথমে মন্ত্রিসভার সদস্যদের গণপদত্যাগের মুখে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানো। এরপর নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক-আলোচনা। এসবের মধ্যে প্রধানমন্ত্রিত্বের এই হাতবদল কতটা ব্যতিক্রম কিংবা নতুন প্রধানমন্ত্রীর ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে, তা নিয়ে আল-জাজিরায় লিখেছেন ব্রিটিশ আইনজীবী ডেভিড অ্যালেন গ্রিন। তাঁর লেখাটি অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।
বরিস জনসনের পদত্যাগ করার পর যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আসবেন হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস, নয়তো সাবেক অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক। দেশটিতে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির নেতৃত্ব পেতে চলতি গ্রীষ্মজুড়ে এই দুই রাজনীতিবিদ একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার চেষ্টায় থাকবেন। সবশেষে দলের সদস্যদের ভোটে তাঁদের মধ্য থেকে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন—তা জানা যাবে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
যুক্তরাজ্যে এই মুহূর্তে যে রাজনৈতিক নাটকীয়তা চলছে, তা কয়েক দিক দিয়ে বিবেচনা করলে ব্যতিক্রম নয়। প্রথমেই আসে দেশটিতে দুটি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রিত্ব বদলের বিষয়টি। যুক্তরাজ্যে এমন ঘটনার নজির রয়েছে অনেক। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৪ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের সব প্রধানমন্ত্রীই দুটি সাধারণ নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে হয় ক্ষমতা ধরে রেখেছেন অথবা তাঁকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে।
আবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় বর্তমান বা সাবেক কোনো মন্ত্রীর নাম থাকাটাও যুক্তরাজ্যে ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনা নয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৬৩, ১৯৭৬, ১৯৯০, ২০০৭, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের। এই বছরগুলোতে দুই নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেছিলেন দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
এ দিক দিয়ে লিজ ট্রাস বর্তমানে মন্ত্রিসভায় রয়েছেন, তবে ঋষি সুনাক এখন আর মন্ত্রী নন। বরিস জনসন পদত্যাগ করার আগে তাঁর মন্ত্রিসভার যে কয়জন মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন, তাঁদের একজন সুনাক। তবে যুক্তরাজ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ঘটনাও কিন্তু ব্যতিক্রম নয়।
তবে এসবের বাইরে আগে যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী পদে যেভাবে বদল ঘটেছে, তার থেকে বর্তমানে রাজনৈতিক নাটকীয়তার ভিন্নতা রয়েছে। এর আগে কখনো দেশটির একদল মন্ত্রীর গণপদত্যাগের জেরে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়নি। এর ফলে যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি সরকারি দপ্তরের মন্ত্রী পদে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের সদস্যদের প্রতিনিধিত্ব নেই।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় বর্তমান বা সাবেক কোনো মন্ত্রীর নাম থাকাটাও যুক্তরাজ্যে ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনা নয়। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৬৩, ১৯৭৬, ১৯৯০, ২০০৭, ২০১৬ ও ২০১৯ সালের। এই বছরগুলোতে দুই নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসেছিলেন দেশটির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
বর্তমান সরকার যে সংকটে রয়েছে, তা ফুটে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীদের নিয়ে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দুটি টেলিভিশন বিতর্কে। ওই বিতর্কে কোনো কোনো প্রতিযোগী সরকারের অনেক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন। অনেকেই আবার দোষ খুঁজে পেয়েছেন সরকারের সব কাজেই। সমালোচনা করতে ছাড়েননি বর্তমান অনেক মন্ত্রীও।
তাই এখানে এটা ব্যতিক্রম নয় যে দুই নির্বাচনের মধ্যবর্তী সময়ে নতুন কেউ প্রধানমন্ত্রী হবেন বা তিনি সাবেক বা বর্তমান কোনো জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী। ব্যতিক্রম হলো, খোদ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কর্তৃত্ব হারিয়েছে। নতুন প্রধানমন্ত্রীকে শুধু দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেই হবে না, তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের গ্রহণযোগ্যতাও নতুনভাবে তৈরি করতে হবে।
এই চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে নতুন প্রধানমন্ত্রী খুব বেশি সময় পাবেন না। যুক্তরাজ্যের চলতি পার্লামেন্টের মেয়াদের অর্ধেকের বেশি সময় এরই মধ্যে পেরিয়ে গেছে। সংবিধান অনুযায়ী, আগামী ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করতে হবে। আর ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ওই নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। ১৯৬৪, ১৯৯৭ ও ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের রায় গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে। ভোটাররা তখন পরিবর্তন চেয়েছিলেন। একই ঘটনা যে এবারও ঘটবে না, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলগুলো যখন এক জোট ও দৃঢ়সংকল্প থাকে, তখন এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলোও বেশ ঐক্যবদ্ধ।
সবকিছু মিলিয়ে লিজ ট্রাস কিংবা ঋষি সুনাক যিনিই প্রধানমন্ত্রী হোন না কেন, তাঁকে প্রবল চাপের মুখে থাকতে হবে। মূল চাপটা থাকবে আগামী নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে দলের ক্ষমতা ধরে রাখার। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গ্রহণযোগ্যতা ফিরিয়ে আনা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন নীতি বাস্তবায়নের বিষয়গুলো থাকবে।
যুক্তরাজ্যে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। ১৯৬৪, ১৯৯৭ ও ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভোটারদের রায় গিয়েছিল ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষে। ভোটাররা তখন পরিবর্তন চেয়েছিলেন। একই ঘটনা যে এবারও ঘটবে না, তা কিন্তু বলা যাচ্ছে না। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দলগুলো যখন এক জোট ও দৃঢ়সংকল্প থাকে, তখন এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দলগুলোও বেশ ঐক্যবদ্ধ।
তাই বলা যায়, এটি একটি অসামান্য রাজনৈতিক পরীক্ষা হতে চলেছে, যা যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে খ্যাতিমান রাজনীতিবিদের জন্যও প্রযোজ্য। ট্রাস ও সুনাকের এই পরীক্ষায় উতরানোর সক্ষমতা রয়েছে বলে খুব কম পর্যবেক্ষকই মনে করছেন। অর্থ এটাই দাঁড়ায়, এখন থেকে আগামী সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত হয়তো রাজনৈতিক এই নাটক চলতেই থাকবে।