বাড়তি তাপমাত্রা ও প্রখর খরতাপে এক সপ্তাহ ধরে পুড়ছে ইউরোপের বড় একটি অংশ। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পর্তুগাল, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে তাপমাত্রা হু হু করে বাড়ছে। উষ্ণতম তাপমাত্রার জন্য যুক্তরাজ্যে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পর্তুগাল–স্পেন-ফ্রান্সের অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে দাবানল। স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাড়তি তাপমাত্রার জেরে মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে।
যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে স্থানীয় সময় সোমবার ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হতে পারে বলে মনে করছে আবহাওয়া দপ্তর। দেশটির প্রধান আবহাওয়াবিদ পল ডেভিস জানান, মঙ্গলবার নাগাদ তাপমাত্রা ৪০ কিংবা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যেতে পারে। এটাই হতে পারে যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২০১৯ সালে কেমব্রিজে, ৩৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তাপপ্রবাহের জন্য যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া দপ্তর ইয়র্ক ও ম্যানচেস্টার থেকে লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব পর্যন্ত ইংল্যান্ডের বড় অংশজুড়ে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে। দেশটির বাকি অংশেও উচ্চ তাপমাত্রার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইংল্যান্ডের বাকি অংশ, পুরো ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের কিছু অংশে জারি হয়েছে হলুদ সতর্কতা। অন্যদিকে লন্ডনের তাপমাত্রা আগামীকাল বুধবার শীতল হতে পারে।
প্রচণ্ড গরমের কারণে যুক্তরাজ্যের কিছু স্কুল আগেভাগে ছুটির পরিকল্পনা করেছে। যদিও দেশটিতে স্কুল খোলা রাখতে সরকারিভাবে নির্দেশিকা জারি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন ছাড়া সোম ও মঙ্গলবার ট্রেনে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে ইতিমধ্যে নির্ধারিত কিছু ট্রেনের সূচি বাতিল করা হয়েছে। বেঁধে দেওয়া হয়েছে ট্রেনের গতিসীমা।
স্পেনে আট দিন ধরে তাপপ্রবাহ বইছে। দেশটির তৃতীয় কার্লোস হেলথ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, স্পেনে বাড়তি তাপ-সংক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যা ৫১০ ছাড়িয়েছে। দেশটির গ্যালিসিয়া, লিওন, কাতালোনিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে দাবানল। বনে লাগা আগুন নেভাতে গিয়ে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জামোরা প্রদেশে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মীর মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্পেন সরকার। এ নিয়ে দেশটিতে দাবানলে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুরো স্পেনে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদেরা।
পর্তুগালে এক সপ্তাহ পর গতকাল গরম কিছুটা কমেছে। তবে তাপমাত্রা বেশি থাকায় দেশজুড়ে দাবানল ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে পর্তুগালের আবহাওয়াবিষয়ক দপ্তর আইপিএমএ। দেশটির অন্তত নয়টি জায়গায় দাবানল দেখা দিয়েছে। নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের হাজারের বেশি কর্মী। এ কাজে মোতায়েন করা হয়েছে ১৪টি উড়োজাহাজ।
ফ্রান্সের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ১১ হাজার হেক্টরের বেশি বন দাবানলে পুড়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ওই এলাকা থেকে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের ১ হাজার ২০০ কর্মী। দাবদাহের কারণে ফ্রান্সেও রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।
এদিকে প্রচণ্ড দাবদাহ বইছে ইতালি ও সুইজারল্যান্ডেও। কয়েক দিনের মধ্যে বেলজিয়াম ও জার্মানিতে প্রচণ্ড দাবদাহ দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।