আফ্রিকা মহাদেশের বাইরে এবার ইউরোপের দেশ সুইডেনে এমপক্সের আরও বিপজ্জনক ধরনে সংক্রমিত হওয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। দেশটির জনস্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে সংক্রমণের ঘটনা দেশটিতে এটিই প্রথম।
সংস্থাটি বলেছে, এমপক্স শনাক্ত হওয়া ওই ব্যক্তি আফ্রিকার একটি দেশে অবস্থানকালে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বর্তমানে এমপক্সের ‘ক্লেড ১’ ধরনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
আফ্রিকার অংশবিশেষে ছড়িয়ে পড়া এমপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর সুইডেনে এমপক্সের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানা গেল।
আফ্রিকার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় এমপক্সের প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবে অন্তত ৪৫০ জন মারা গেছেন। এর পর থেকে এ মহাদেশের মধ্য ও পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি দেশেও রোগটি ছড়িয়ে পড়ছে।
সুইডিশ জনস্বাস্থ্য সংস্থার ভারপ্রাপ্ত প্রধান অলিভিয়া উইগজেল জানান, সুইডেনে এমপক্সের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি স্টকহোমের একটি এলাকায় আছেন। সুইডেনে তাঁর চিকিৎসা চলছে। এর অর্থ এটি নয় যে দেশটির বৃহত্তর জনগোষ্ঠী সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, আক্রান্ত ব্যক্তি দেশের বাইরে আফ্রিকায় অবস্থানকালে সংক্রমিত হন।
আফ্রিকার অংশবিশেষে ছড়িয়ে পড়া এমপক্স নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর সুইডেনে এমপক্সের রোগী শনাক্ত হওয়ার কথা জানা গেল।
এমপক্সের জন্য দায়ী মাঙ্কিপক্স ভাইরাস। এমপক্স রোগটি আগে মাঙ্কিপক্স নামেও পরিচিত ছিল। এটি স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য দায়ী ভাইরাসের একই শ্রেণিভুক্ত। মাঙ্কিপক্স প্রথম পশু থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। কিন্তু বর্তমানে মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমণ ঘটছে।
এমপক্সে সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস অন্যজনের শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। এমন সংস্পর্শের মধ্যে রয়েছে শারীরিক সম্পর্ক, ত্বকের স্পর্শ, কাছাকাছি থেকে কথা বলা বা শ্বাসপ্রশ্বাস। এ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ ফ্লুর মতো। রোগের একপর্যায়ে শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং এটি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে।
পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় বনাঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকায় এ ভাইরাসের বেশি প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যায়। প্রতিবছর এসব অঞ্চলে হাজারো মানুষ এমপক্সে সংক্রমিত হন। বর্তমানে বেশি আক্রান্ত দেশগুলোর একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো)।
এ মুহূর্তে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের কয়েকটি ধরনে সংক্রমণের ঘটনা যুগপৎভাবে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে একটি ধরন বেশি বিপজ্জনক। ‘ক্লেড ১বি’ নামের ধরনটি গত বছরের সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয়েছে।
‘ক্লেড ১’–এর দুটি ধরন রয়েছে। সুইডেনে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি ‘ক্লেড ১বি’–এর সংক্রমণের শিকার। ধরনটিতে সংক্রমণের প্রথম ঘটনা গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোয় শনাক্ত হয়। তবে এটির সংক্রমণ এখন বুরুন্ডি, কেনিয়া ও রুয়ান্ডাতেও নিশ্চিত হয়েছে। অতিসম্প্রতি তা সুইডেনে শনাক্ত হলো।
ইতিপূর্বে ২০২২ সালে এমপক্সের ‘ক্লেড ২’ ধরনের সংক্রমণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। ধরনটি তুলনামূলক মৃদু। সুইডেনে মৃদু এ ধরনটিতে এরই মধ্যে প্রায় ৩০০ জনের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা শনাক্ত হয়েছে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে ‘ক্লেড ২’ ধরন প্রায় ১০০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। এর মধ্যে ছিল এশিয়া ও ইউরোপের কিছু দেশও। ঝুঁকিতে থাকা গোষ্ঠীগুলোকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ওই সংক্রমণ।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের দিকে এমপক্সের ভাইরাসের রূপ বদল হয়। এই রূপবদলে তৈরি হওয়া নতুন ধরনের নাম ‘ক্লেড ১বি’। তখন থেকেই এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এটিকে একজন বিজ্ঞানী ‘এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে সুইডেনে এমপক্সের বিপজ্জনক ধরনে আক্রান্ত রোগী পাওয়ার ঘটনায় ডব্লিউএইচও বলেছে, দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে তারা।
সুইডেনের জনস্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এমপক্সের অধিকতর বিপজ্জনক ধরনে সংক্রমণের ঘটনা ধরা পড়ায়, ধরনটিতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
ইংল্যান্ডের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিরব্রাইট ইনস্টিটিউটের ডা. জোনাস আলবার্নাজ বলেন, আফ্রিকার বাইরে এমপক্সের সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার অর্থ, তাঁরা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া নিয়ে গতকালও যে তথ্য জানতেন, প্রকৃত অবস্থা হয়তো তার চেয়ে গুরুতর।
ডব্লিউএইচওর ঘোষণার আগে গত মঙ্গলবার আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) বিজ্ঞানীরা রোগটি নিয়ে জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বর্তমান প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও সতর্ক করে দেন সংস্থাটির প্রধান জ্যঁ কেসিয়া।
সিডিসি বলেছে, চলতি বছরের শুরু থেকে গত জুলাই পর্যন্ত এমপক্সে ১৪ হাজার ৫০০-এর বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছেন অন্তত ৪৫০ জন। ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় সংক্রমণের এ হার ১৬০–এর বেশি ও মৃত্যুর হার বেশি ১৯ শতাংশ।