শ্যাম্পেইন হাতে নতুন বছরে বার্তা দিলেন পুতিন, সমালোচনা জেলেনস্কির

নতুন বছরে বার্তা দেন পুতিন
ছবি: রয়টার্স

নতুন বছরে নতুন বার্তা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। খবর বিবিসি ও এএফপির।

শ্যাম্পেইনের গ্লাস হাতে দেওয়া ভাষণে পুতিন পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে দুর্বল করার ও রাশিয়াকে বিভক্ত করার অভিযোগ তুলেছেন। আর জেলেনস্কি রাশিয়ার জনগণকে বলেছেন, পুতিন সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন, এমনটা দেখাতে চাইলেও তিনি আসলে পেছনে লুকিয়ে আছেন।

নতুন বছরে রাশিয়ার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়া মারাত্মক হামলা চালিয়েছে বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয়রা রাশিয়াকে ক্ষমা করবে না। রুশ হামলায় দেশটিতে অন্তত একজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

নতুন বছরে দেওয়া ভাষণে পুতিনের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি

নতুন বছর শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে প্রথম হামলা চালায় রাশিয়া। ইউক্রেনের দুটি শহরে এ হামলা হয়। এ সময় কিয়েভে ১১টির বেশি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন এএফপির সাংবাদিক।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন বছরের প্রথম দিন আজ রোববার কিয়েভে আবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ভালেরি জালুঝনি বলেছেন, বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা গতকাল ২০টি রুশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে ১২টি ধ্বংস করেছে।

টেলিগ্রাম চ্যানেলে জেলেনস্কি বলেছেন, যারা গতকাল হামলা চালিয়েছে, তারা অমানুষ। এরপর তিনি রাশিয়ার নাগরিক ও পুতিনকে আক্রমণ করেন। জেলেনস্কি রাশিয়ার নাগরিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের নেতা দেখাতে চায়, তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সামরিক বাহিনী তাঁর পেছনে। তবে বাস্তবতা হলো, তিনি লুকিয়ে আছেন। তিনি সামরিক বাহিনী, ক্ষেপণাস্ত্র, তাঁর বাসভবনের দেয়াল ও প্রাসাদের পেছনে লুকিয়ে আছেন।’

জেলেনস্কি তাঁর ভাষণে আরও বলেন, ‘তিনি (পুতিন) আপনাদের পেছনে লুকিয়ে আছেন। তিনি আপনাদের দেশকে ও ভবিষ্যৎকে পোড়াচ্ছেন। সন্ত্রাসের জন্য কেউ আপনাকে (পুতিন) ক্ষমা করবে না। বিশ্বের কেউ এ জন্য আপনাকে (পুতিন) ক্ষমা করবে না। ইউক্রেন ক্ষমা করবে না।’

এরপর ইউক্রেনীয় জনগণের উদ্দেশে নতুন বছরের ভাষণ দেন জেলেনস্কি। রাশিয়াকে প্রতিরোধের জন্য তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরো দেশ একদল হয়ে যুদ্ধ করছি। আমি আপনাদের সবাইকে শ্রদ্ধা করি। আমি ইউক্রেনের সব অঞ্চলের মানুষকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’

দুই দিন আগে ইউক্রেনে বড় ধরনের বিমান হামলা চালায় রাশিয়া। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এটি ছিল অন্যতম বড় হামলা। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহে একের পর এক হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

যদিও মস্কো বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে তারা হামলা চালায়নি। তবে জ্বালানি ক্ষেত্রে হামলার কথা স্বীকার করেছেন পুতিন।

হামলার কারণ বললেন পুতিন

নতুন বছর উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেন, রাশিয়ার ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় জানতাম, আর আজও জানি, সার্বভৌম, স্বাধীন রাশিয়ার নিরাপদ ভবিষ্যৎ আমাদের ওপর নির্ভর করে। আমাদের শক্তি ও ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে।’

ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানোর কারণ তুলে ধরেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ ও ঐতিহাসিক ভূমিকে রক্ষার জন্য এমন হামলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘নৈতিক, ঐতিহাসিক ন্যায্যতা আমাদের পক্ষে।’

পুতিন আরও বলেছেন, ‘রাশিয়াকে হামলা চালাতে উসকানি দিয়েছে পশ্চিমারা। তিনি বলেন, পশ্চিমারা শান্তি নিয়ে মিথ্যা বলেছে। পশ্চিমারা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল...এবং এখন তারা নিষ্ঠুরভাবে ইউক্রেনকে ও দেশটির জনগণকে ব্যবহার করছে। তারা ইউক্রেনের জনগণকে দুর্বল করতে ও রাশিয়াকে বিভক্ত করতে চাইছে।’

তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা বিশ্ব হামলার পেছনে রাশিয়া যে কারণ তুলে ধরেছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইউক্রেনে যুদ্ধরত সেনাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পুতিন ভাষণ দেন। রাশিয়ার সরকারি টিভিতে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, পুতিন রুশ সেনাদের সঙ্গে শ্যাম্পেইনের গ্লাস তুলে ধরেছেন।