যেভাবে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাল জার্মানি

রাশিয়ার গ্যাসলাইন
ছবি : রয়টার্স

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন ইউরোপে গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দিলেন তখন আসন্ন শীতে জ্বালানি সংকট নিয়ে গভীর সংকটে পড়ার ভয়ে ছিল জার্মানি। দেশটির মন্ত্রীরা বিকল্প উৎস থেকে জ্বালানি খুঁজতে মরিয়া হয়ে পড়লেন। রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়ে তাঁরা অবগত ছিলেন। এতে শিল্পনির্ভর দেশটির ঝুঁকির বিষয়টিও তাঁরা ভালোভাবেই বুঝে ছিলেন।

কিন্তু এরপর কয়েক মাস যেতে না যেতেই আশার আলো দেখতে পেলেন জার্মানরা। জার্মানি রুশ গ্যাস–নির্ভরতা কমাতে দ্রুত কিছু কৌশল নিতে শুরু করল। দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, তা কয়েক মাস আগে যে কৌশল বেছে নিয়েছে তাতে রুশ গ্যাসের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমছে। তাদের কৌশল কাজ করতে শুরু করেছে।

গত বুধবার জার্মান পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, ‘শীতে জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা গেছে।’ দেশটির গ্যাস সংরক্ষণাগারগুলো পূর্ণ হয়ে গেছে। শীতকালীন জ্বালানিসংকট মোকাবিলায় জার্মানির পক্ষ থেকে বেশি দাম দিয়ে হলেও জ্বালানিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশটির নর্থ সি উপকূলে দ্রুততম সময়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে।

আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জন্য জার্মানির বদনাম রয়েছে। দেশটির অনেক প্রকল্প আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে যায়। এলএনজি টার্মিনাল তৈরির মতো প্রকল্পগুলো শেষ করতে সাধারণত কয়েক বছর লেগে যায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ লাল ফিতার দৌরাত্ম্য দূরে সরিয়ে এই টার্মিনাল প্রকল্প শেষ করতে ২০০ দিনেরও কম সময় নিয়েছে।

জার্মানির এই এলএনজি টার্মিনালের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে একটি ভাসমান এলএনজি সংরক্ষণাগার ও এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করার ইউনিট (এফএসআরইউ)। এই এফএসআরইউ মূলত একটি বিশেষায়িত জাহাজ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এখানে যুক্তরাষ্ট্র, নরওয়ে ও আমিরাতের পক্ষ থেকে তাদের কার্গোগুলোতে করে এলএনজি সরবরাহ করতে পারবে। টার্মিনাল অপারেটর হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ইউনিপার জার্মান সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। জার্মানিকে কোন কোন দেশ জ্বালানি সরবরাহ করছে তারা জানায়নি। তবে বলেছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে।

এটি ছাড়া আরও পাঁচটি এলএনজি টার্মিনাল তৈরির পরিকল্পনা করছে জার্মানি। আগামী বছর এগুলো তৈরি শেষ হবে।

জার্মানির শিল্প খাত প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল

জার্মানির ভিলহেলমসহ্যাভেন থেকে আধা ঘণ্টার দূরত্বে ইটের কারখানা রয়েছে আর্নস্ট বুচৌয়ের। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি কোনো গ্যাস না পাই, আমাদের চুলা বন্ধ রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, একসময় পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে রূপান্তর করবেন তার কারখানা। কিন্তু তার জন্য সময় লাগবে। এখন তাকে গ্যাসের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।

এক বছর আগেও জার্মানির চাহিদার ৬০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করত রাশিয়া। এর বেশির ভাগ সরবরাহ করা হতো নর্ডস্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে। জার্মানির জ্বালানি সংস্থা বলছে, রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া চলার চেষ্টা করছে জার্মানি। কিন্তু শীতের সময় গ্যাসের ঘাটতি পূরণে বিশেষজ্ঞরা আগামী বছরের শুরুতেই এলএনজি টার্মিনাল চালু করার কথা বলছেন। এতে রাশিয়ার গ্যাস ব্যবহার ২০ শতাংশ কমবে। এ পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছালে তা জার্মানির জন্য বড় অর্জন হবে। কিন্তু এর জন্য মূল্য দিতে হবে জার্মানিকে।

অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশ হিসেবে জার্মানি যখন যেটা চেয়েছে, তা পেয়েছে। কিন্তু এলএনজির চাহিদা এখন বিশ্বজুড়ে। এতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

উইলি ব্র্যান্ড স্কুল অব পাবলিক পলিসির অধ্যাপক আন্দ্রেয়াস গোল্ডথাউ বলেন, উদীয়মান অর্থনীতির অনেক দেশ তাদের প্রয়োজনীয় এলএনজি কিনতে পারবে না। ইউরোপিয়ানদের তুলনায় তাদের ক্রয়ক্ষমতা কম। বিশেষ করে জার্মানির তুলনায়। এতে এসব দেশ কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের দিকে ঝুঁকবে।