নেদারল্যান্ডসে জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছে মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত দল পার্টি ফর ফ্রিডম (পিভিভি)। শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নয়, নেদারল্যান্ডসে এর আগে কোনো দল এত ভোট পায়নি। পিভিভি ও দলটির নেতা গ্রিট ভিল্ডার্সের বিজয়ের খবর দেশটির মুসলিমদের বিচলিত করেছে। ভিল্ডার্স কট্টর ডানপন্থী রাজনীতিক এবং মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত।
এই নির্বাচনের ফল আসার পরই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে নেদারল্যান্ডসের একটি শহরের মেয়র আহমেদ মারকাউচের আট বছরের ছেলে। নির্বাচনের ফল ঘোষণার দিনই সে দেশের রাজনৈতিক দল ও দলগুলোর মতাদর্শ সম্পর্কে ধারণা পায়। এ ধারণা হওয়ার কারণেই তার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করেছিল বেশি। নির্বাচনের ফল দেখে কিশোর ছেলের মনে এমন আতঙ্ক দেখে বিচলিত হয়ে পড়েন আহমেদ মারকাউচ। ছেলেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
সেদিনই আহমেদ মারকাউচের ছেলের স্কুলে তার এক শিক্ষক নির্বাচনের ফলাফলে কী হয়, তা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়েছিলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কী কী পার্থক্য, সেগুলোও ছাত্রকে বোঝানোর চেষ্টা করেন তিনি। শিক্ষকের কাছ থেকে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে সম্যক ধারণা পাওয়ার দিন হয় ফলাফল ঘোষণা। এতে আহমেদের ছেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাঁর ধারণা, পরিবারসহ তাকে এবার নেদারল্যান্ডস ছেড়ে চলে যেতে হবে।
বিষয়টি জানিয়ে আহমেদ বললেন, ‘ঘটনাটি ছিল হৃদয়বিদারক।’ আহমেদ মারকাউচ মরোক্কান বংশোদ্ভূত একজন ডাচ নাগরিক। দেশটির পূর্বাঞ্চলের আর্নহেম শহরের মেয়র তিনি। সমাজে রাজনৈতিক বিভাজন কত তীব্র হয়েছে তা উল্লেখ করে আহমেদ বলেন, ‘আমার ছেলের বাবা একজন মেয়র। এরপরও সে আতঙ্কিত এই দলটি যদি সরকার গঠন করে তাহলে তার পরিবারের সবাইকে দেশ থেকে তাঁড়িয়ে দেবে।’
আহমেদ মারকাউচ লেবার পার্টির একজন নেতা। ২০১৭ সালে আর্নহেম শহরের হাল ধরেন তিনি। এরপর থেকে গত ছয় বছরেরও বেশি সময়ে তিনি শহরটির ১ লাখ ৭০ হাজার বাসিন্দাকে এক করার জন্য কাজ করে আসছেন। শতাধিক দেশের মানুষ শহরটিতে বসবাস করেন।
মাত্র ১০ বছর বয়সে মরক্কো থেকে নেদারল্যান্ডসে অভিবাসী হিসেবে পাড়ি জমান আহমেদ মারকাউচ। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি সরাসরি ভিল্ডার্সের আক্রমণের শিকার হয়েছেন এর আগে। নির্বাচনে ভিল্ডার্সের জয় তাঁকে অনিশ্চিত এক জায়গায় নিয়ে ফেলেছে।
আহমেদ যে শহরের মেয়র সেই আর্নহাম দেশটির গিল্ডারল্যান্ড প্রদেশে অবস্থিত। বিগত নির্বাচনে এই প্রদেশে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দলটি ভিল্ডার্সের পিভিভি। প্রদেশটির ২০ শতাংশ ভোটার এমন একটি দলকে ভোট দিয়েছেন, যে দল ক্ষমতায় এলে সরকারি স্থাপনায় স্কার্ফ নিষিদ্ধ, দ্বৈত নাগরিক অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শ্রমিকদের অবাধ চলাচল নিষিদ্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।