যুক্তরাজ্যের ব্রেকন বিকন্স পর্বত এলাকায় গত শনিবার পা পিছলে পড়ে যান এক গুহা অভিযাত্রী। শরীরে আঘাত পাওয়ার কারণে মস্ত ওই গুহা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হচ্ছিল না। তাঁর সঙ্গে থাকা অপর এক অভিযাত্রী পুলিশকে এ ব্যাপারে জানালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে উদ্ধারকারী দল। তবে ওই গুহা থেকে তাঁকে বের করে আনতে হিমশিম খাচ্ছিলেন উদ্ধারকারীরা। তাঁদের সঙ্গে অনেক স্বেচ্ছাসেবকও অভিযানে অংশ নেন। শেষ পর্যন্ত ৫৩ ঘণ্টার প্রচেষ্টা শেষে সোমবার তাঁকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাঁকে গুহা থেকে বের করে আনার পর করতালি দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন উদ্ধারকারীরা। খবর বিবিসির।
সাউথ অ্যান্ড মিড ওয়েলস কেইভ রেসকিউ টিম (এসএমডব্লিউসিআরটি) জানিয়েছে, পাউয়িসের পেনউয়িলট উপত্যকার কাছে ওগোফ ফিন্নন ডি নামের গুহাপ্রণালিতে পড়ে যান। উদ্ধারকারী পিটার ফ্রান্সিস বলেছেন, ওই ব্যক্তি অভিজ্ঞ ও দক্ষ গুহা অভিযাত্রী। কোনোভাবে ভুল জায়গায় তাঁর পা পড়ে যাওয়াতে ওই ঘটনা ঘটেছে। তাঁর পায়ের নিচ থেকে কিছু একটা সরে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে। ওই ব্যক্তির শরীরের কয়েক জায়গায় আঘাত লেগেছে।
কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে ওই পর্বত এলাকায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স হেলিকপ্টার অবতরণ করতে পারেনি। পরে ওই অভিযাত্রীকে স্ট্রেচারে করে পর্বত থেকে নামিয়ে সড়কপথে অপেক্ষারত অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত নিয়ে যান উদ্ধারকারীরা।
জরুরি সেবা সমন্বয়কারী কর্মকর্তা গ্যারি ইভান্স বলেন, ওই ব্যক্তি যত সময় গুহায় ছিলেন এবং যত সময় স্ট্রেচারে ছিলেন, সেটা বিবেচনা করলে তাঁর শারীরিক অবস্থা অনেকখানি ভালো আছে।
প্রায় আড়াই শ মানুষ উদ্ধার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন। যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁরা আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য। অনেকে নর্থ ইয়র্কশায়ারের মতো দূরবর্তী এলাকা থেকেও এসেছেন। কেউ কেউ আবার ২০১৮ সালে থাই গুহায় আটকে পড়াদের উদ্ধার অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন।
ওয়েলসের কোনো গুহায় পরিচালিত সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের অভিযান ছিল এটি। সময় লেগেছে ৫৩ ঘণ্টার বেশি। এর আগের দীর্ঘতম অভিযানটিতে সময় লেগেছিল ৪১ ঘণ্টা।
ওগোফ ফিন্নন ডি গুহাটি প্রায় ৯০২ ফুট গভীর। ওয়েলসে অবস্থিত দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং যুক্তরাজ্যের অন্যতম গভীর গুহার একটি এটি। ন্যাচারাল রিসোর্সেস ওয়েলসের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৬ সালে গুহাগুলো আবিষ্কার করেছিল সাউথ ওয়েলস কেইভিং ক্লাব। এখানে কয়েকটি ভূগর্ভস্থ জলস্রোত ও জলপ্রপাত রয়েছে। কেইভিং ক্লাবের অনুমতি ছাড়া সেখানে গুহা অভিযাত্রীরা যেতে পারেন না।
কেইভিং ক্লাবের ওয়েবসাইটে ওগোফ ফিন্নন ডি গুহা সম্পর্কে বলা হয়, গুহাটিতে অনেকগুলো পথ রয়েছে। ওয়েবসাইটে দেওয়া নির্দেশিকায় সতর্ক করে বলা হয়েছে, গুহার মূল অংশসহ আরও কিছু এলাকা বন্যাপ্রবণ। এ গুহার ভ্রমণপথ দীর্ঘ, ঠান্ডা ও আর্দ্র। এ ব্যাপারে সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়।