কৃষ্ণসাগরের স্নেক আইল্যান্ড।
কৃষ্ণসাগরের স্নেক আইল্যান্ড।

‘স্নেক আইল্যান্ড’ থেকে সেনা প্রত্যাহার রাশিয়ার

কৃষ্ণসাগরে অবস্থিত স্নেক আইল্যান্ড থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। আজ বৃহস্পতিবার রুশ বাহিনীর এ ঘোষণাকে বিজয় হিসেবে দেখছে ইউক্রেন। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধে দ্বীপটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নৌপথে বিশ্বে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়ার যে বাধা রয়েছে, মস্কোর এ ঘোষণার কারণে তা অনেকটা শিথিল হতে পারে।

দ্বীপটি থেকে সেনা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে ‘সদিচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে অভিহিত করছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। ক্রেমলিন বলছে, ইউক্রেনের বন্দরগুলো থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির পথ তৈরি করতে জাতিসংঘ যে চেষ্টা চালাচ্ছে, রাশিয়ার তাতে বাধা দেওয়ার যে কোনো ইচ্ছা নেই, সেনা প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত তারই প্রতিফলন।

তবে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, গতকাল বুধবার রাতভর ব্যাপক গোলাবর্ষণ ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে দ্বীপটি থেকে রুশ সেনাদের পিছু হটতে বাধ্য করেছে তারা।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রিয়ে ইয়ারমাক টুইট করেন, ‘স্নেক আইল্যান্ডে আর একজন রুশ সেনাও নেই। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দারুণ এক কাজ করেছে।’

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছে। ওপর থেকে তোলা ছবিতে দ্বীপ থেকে কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর দাবি, তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও গোলাবর্ষণ করার পর থেকেই সেখান থেকে ধোঁয়া উড়ছে।

ছবিটি পোস্ট করে আরও বলা হয়েছে, ‘হামলার পর সেখানে থাকা শত্রুপক্ষের বাকি সেনারা দ্রুতই দুটি স্পিডবোটে করে পালিয়ে যায়। সম্ভবত তারা দ্বীপটি ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে স্নেক আইল্যান্ডের চারপাশে শুধু আগুন। বিস্ফোরণ হচ্ছে।’ তবে ওই ছবিটি স্নেক আইল্যান্ডেরই কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা নিশ্চিত হতে পারেনি রয়টার্স। ইউক্রেনের দাবির বিষয়টিও স্বাধীনভাবে নিশ্চিত করা যায়নি।

রয়টার্স বলছে, সমুদ্রপথে ইউক্রেনের ওদেসা যাওয়ার যে রুট, তার নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই দ্বীপ থেকে। ওদেসা হলো কৃষ্ণসাগর উপকূলের প্রধান বন্দরনগরী। রুশ বাহিনীর অবরোধে সেখান থেকে শস্যদানা রপ্তানি করতে পারছিল না বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শস্যদানা রপ্তানিকারক দেশ ইউক্রেন। এ কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহব্যবস্থায় সংকট তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে বিশ্বে। ফলে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম অনেক বেড়ে যায়।

রাশিয়া এখন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে। রুশভাষী-অধ্যুষিত ওই অঞ্চলটিতে ইউক্রেনের বাহিনী অনেকটা কোণঠাসা। এর মধ্যে রাশিয়া ইউক্রেনের বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়েছে। তবে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায় ইউক্রেন পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোর কাছে আরও সামরিক সহায়তা চেয়েছে। এরই মধ্যে ইউক্রেনে আরও ১০০ কোটি পাউন্ড সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। বুধবার দেশটি এ প্রতিশ্রুতি দেয়। সামরিক সহায়তার মধ্যে বিমান ও ড্রোন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা রয়েছে। ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র ও অর্থসহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর নেতারা।