স্কটল্যান্ডের বেশির ভাগ মানুষ এবার স্বাধীনতা চায়

প্রাথমিক স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটান স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওন। রিভারসাইড প্রাইমারি স্কুল, যুক্তরাজ্য, ১৯ মার্চ ২০১৮।
রয়টার্স (ফাইল ছবি)

আগামী বছর নতুন পার্লামেন্ট অধিবেশন শুরুর পরপরই স্কটল্যান্ডে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন সেখানকার ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওন। রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, স্টারজিওনের দাবি অনুযায়ী স্কটল্যান্ডে আবার যদি গণভোট হয় ও তাতে জনগণ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দেয়, তবে তা হবে শত বছর আগে আয়ারল্যান্ড স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ)–পরবর্তী যুক্তরাজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত।

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতাপন্থী স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা স্টারজিওন বিবিসিকে বলেন, তাঁদের মতে, আগামী বছর নতুন পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর পর এ গণভোট আয়োজন করা উচিত।

স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে ২০১৪ সালে গণভোটে সেখানকার অধিবাসীদের মতামত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই ওই ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। বরিস সরকার বলছে, নিকট ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরেকটি গণভোট আয়োজন করা ঠিক হবে না।
বরিস জনসন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতার প্রশ্নে এর আগে ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই গণভোটে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার বিপক্ষে ভোট দেন ৫৫ শতাংশ মানুষ। পক্ষে ভোট পড়ে ৪৫ শতাংশ। তবে পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ও ব্রিটিশ সরকার যেভাবে করোনা সংকট মোকাবিলা করেছে, তা স্কটিশদের মধ্যে স্বাধীনতার দাবির প্রতি সমর্থন জোরালো করেছে।

গত ১৪টি জনমত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেশির ভাগ স্কটিশ এখন স্বাধীনতার পক্ষে। তাঁদের এ হার ৫১ থেকে ৫৯ শতাংশের মধ্যে। যদিও পূর্ববর্তী বছরগুলোতে স্বাধীনতার প্রশ্নে সমর্থন এত স্পষ্ট ছিল না। ২০১৭–১৯ সালের মধ্যে পরিচালিত জনমত জরিপগুলোর বেশির ভাগের ফলাফলে দেখা গেছে, ওই সময় স্কটল্যান্ডবাসী যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাইছিলেন না। তবে চলতি বছর এ চিত্র পাল্টে গেছে।

আগামী বছরের মে মাসে অনুষ্ঠেয় স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট নির্বাচনে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) ভালো ফল করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দলটি বলছে, তারা নির্বাচনে জিতলে তা আরেকটি গণভোট আয়োজনে তাদের ম্যান্ডেট প্রদান করবে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে ২০১৪ সালে গণভোটে সেখানকার অধিবাসীদের মতামত সুস্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই ওই ফলাফলের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। বরিস সরকার বলছে, নিকট ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরেকটি গণভোট আয়োজন করা ঠিক হবে না।

কিন্তু আগামী ৬ মে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে স্টারজিওন যদি জেতেন, তবে বরিসকে দুই কঠিন বিকল্পের একটি বেছে নিতে হবে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকেরা। এর একটি, তাঁকে গণভোট প্রত্যাখ্যান করতে হবে। তা করলে স্কটল্যান্ডে বরিসের বিরুদ্ধে অসন্তোষ আরও বাড়বে। অন্যটি, গণভোট মেনে নিতে হবে। সেটি করলে যুক্তরাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে স্কটল্যান্ড, যা বরিস ও তাঁর দল কিছুতেই চাইবে না।