জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন ভন্ডুল করে দেওয়া অগ্রহণযোগ্য। সেনা অভ্যুত্থানে যাঁরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁদের বোঝা উচিত এভাবে দেশ শাসন করা যায় না।
বিবিসির আজ বৃহস্পতিবারের খবরে জানা যায়, জাতিসংঘ মহাসচিব মিয়ানমার পুনর্গঠনে সাংবিধানিক আদেশের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি আশা করছেন, এ ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ঐক্যে পৌঁছাবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘এই সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সবকিছু করব।’
গুতেরেস বলেন, নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়া, জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া খুবই অগ্রহণযোগ্য। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে বোঝাতে হবে যে এটা দেশ শাসনের উপায় নয়। এভাবে সামনেও এগিয়ে যাওয়া যায় না।
মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ফেসবুক বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ব্যবহারকারীরা আজ বিবিসিকে জানান, তাঁরা ফেসবুকে ঢুকতে পারছেন না। গতকাল বুধবার মিয়ানমারে তরুণ ও শিক্ষার্থীরা অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দেন। তাঁদের ফেসবুক পেজে হাজার হাজার লাইকও পড়ে।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সেনা অভ্যুত্থান ইস্যুতে সম্ভাব্য বিবৃতি নিয়ে আলোচনা করছে। তবে সেনা অভ্যুত্থানে নিন্দা জানিয়ে দেওয়া যেকোনো বিবৃতি চীন আটকে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যদেশের মধ্যে চীন একটি। তাই চীনের ভেটো দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে।
পশ্চিমা দেশগুলো মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে। চীনের বিরোধিতার কারণে মিয়ানমার ইস্যুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিতে পারেনি।
বেইজিং বলেছে, নিষেধাজ্ঞা অথবা আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। জাতিসংঘের সমালোচনা থেকে মিয়ানমারকে বারবারই সুরক্ষা দিয়েছে রাশিয়াও।
সু চির বিরুদ্ধে গতকাল বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এসব অভিযোগে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রিমান্ডে থাকবেন সু চি। সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) একজন মুখপাত্র জানান, সু চির বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইনে অভিযোগ করা হয়েছে। সু চির বিরুদ্ধে বেআইনি যোগাযোগযন্ত্র রাখার অভিযোগও করেছে পুলিশ। যে এফআইআর পাওয়া গেছে, তাতে বলা হয়েছে, নেপিডোতে সু চির বাসভবনে অবৈধ ওয়াকিটকি পাওয়া গেছে। অভিযোগে পুলিশ বলেছে, এসব অবৈধভাবে আমদানি করেছেন সু চি।
এ ছাড়া সামরিক অভ্যুত্থানের সময় আটক মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উই মিন্তের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে অভিযোগ করা হয়েছে।
এই সেনা অভ্যুত্থান ব্যর্থ করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা সবকিছু করব।জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস
গত সোমবার মিয়ানমারে অভ্যুত্থান করে দেশটির সেনাবাহিনী। সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করেছে তারা। সেনা কর্তৃপক্ষ দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করেছে। সু চিসহ দেশটির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার ও আটকের ঘটনায় গতকাল দেশটির ৩০টি শহরের ৭০টি হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেছেন।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি কোথায় ও কী অবস্থায় আছেন, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।