সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজ ইস্যুতে সৌদি আরবে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক সম্মেলন বর্জন করার কথা ভাবছে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে ওই সম্মেলন থেকে কয়েক জন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও মিডিয়া গ্রুপ তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২ অক্টোবর ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক।
আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, খাসোগির ঘটনায় সৌদি আরবের ওপর আন্তর্জাতিক মহল ক্ষুব্ধ। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে এই মাসে অনুষ্ঠিতব্য বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে কয়েকটি স্পনসর প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া গ্রুপ নাম প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্টিভ নিউচিন ও যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমন্ত্রী লিয়াম ফক্স এই সম্মেলনে অংশ নাও নিতে পারেন।
সৌদি আরবের এজেন্টরা খাসোগিকে হত্যা করেছে—নিশ্চিত হওয়া গেলে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দেওয়ার বিষয়টিও আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা।
সম্মেলনটির আয়োজক সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এই সম্মেলনের মাধ্যমে সৌদি আরবে তাঁর নানান সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরবেন তিনি। নিউচিন বা ফক্স যদি এই সম্মেলনে অংশ না নেন, তাহলে তা সৌদি আরবের দুই মিত্র দেশের পক্ষ থেকে তিরস্কার হিসেবেই ধরা হবে।
যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, লিয়াম ফক্স সম্মেলনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করেননি।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর আগে বিবিসিকে বলেছেন, খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছে, তা একবার স্পষ্ট হলে সরকারগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কীভাবে ‘যথাযথ উপায়ে’ প্রতিক্রিয়া জানাবে।
সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, খাসোগির মৃত্যুর জন্য সৌদি আরব দোষী প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্র ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা নেবে। তিনি জানান, এমন কিছু হলে তিনি ‘খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হবেন’। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করার বিষয়ে তিনি রাজি নন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা করা হলে আমাদের নিজেদের শাস্তি দেওয়া হবে। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে না কেনে, তাহলে রাশিয়া বা...চীনের কাছ থেকে কিনবে।’
এদিকে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনাটি সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ তদন্তে সম্মত হয়েছে তুরস্ক। গত শুক্রবার সৌদি প্রতিনিধিদল তুরস্কে পৌঁছেছে। তবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুত কাভুসোগলু অভিযোগ করেছেন, সৌদি আরব তদন্তে সহযোগিতা করছে না। তিনি তুর্কি কর্তৃপক্ষকে কনস্যুলেট ভবনে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।
তুরস্ক দাবি করেছে, কনস্যুলেট ভবনে খাসোগি হত্যার অডিও, ভিডিও ও প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক খাসোগি গ্রেপ্তার–আতঙ্কে এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোয় ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। এদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।