মাত্র চারটি দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বিশ্বের বেশির ভাগ কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান কারণ কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাসের অতিরিক্ত নির্গমন।
ইইউ ছাড়া অপর চার দেশ হলো চীন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ভারত। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি সীমিত রাখার লক্ষ্যে নির্গমন কমাতে এই চার দেশ ও ইইউ ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তারপর তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বিবিসি অনলাইন।
চীন
চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশ। বৈশ্বিক নির্গমনের এক-চতুর্থাংশের জন্য দায়ী চীন। বিশেষ করে কয়লানির্ভরতার কারণে দেশটির কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন এখনো বাড়ছে। চীনের মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ৮ দশমিক ১ টন।
চীন ২০২৬ সাল থেকে কয়লার ব্যবহার কমানোর অঙ্গীকার করেছে। বিদেশে নতুন কয়লাভিত্তিক প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করবে বলে গত মাসে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং।
চীনা প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণা সত্ত্বেও দেশটির অভ্যন্তরীণ জ্বালানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে কয়লাখনিগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা বলছে, চীনকে তার জলবায়ুসংক্রান্ত লক্ষ্য অর্জনে ২০৬০ সালের মধ্যে কয়লার চাহিদা ৮০ শতাংশের বেশি কমাতে হবে।
অপর গ্রিনহাউস গ্যাস মিথেনের নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ কমানোর ব্যাপারে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে অঙ্গীকার করেছে শতাধিক দেশ। কিন্তু এই দেশগুলোর মধ্যে চীন নেই।
নজরদারি সংস্থা ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার’ বলছে, চীনের নীতি ও পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সব দেশ যদি একই পথ অনুসরণ করে, তাহলে পৃথিবীর তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে।
চীন ২০৬০ সালের মধ্য ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড–নিরপেক্ষ’ হওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বে মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের দিক দিয়ে সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫ টন।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানির ৮০ শতাংশের বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে আসে। দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সবুজ জ্বালানির আওতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গত এক দশকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমছে। তবে ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য অনুযায়ী বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমিত রাখতে দেশটির বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
যুক্তরাষ্ট্র ২০৫০ সালের মধ্যে ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড-নিরপেক্ষ’ হওয়ার অঙ্গীকার করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
ইইউতে সবচেয়ে কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনকারী দেশগুলো হলো জার্মানি, ইতালি ও পোল্যান্ড। ইইউতে মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ৬ দশমিক ৫ টন।
কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমানোর জন্য ইইউর একটি সার্বিক লক্ষ্যমাত্রা আছে। কিন্তু ইইউর সদস্যদেশগুলোর আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা ভিন্ন।
ইইউর লক্ষ্য অর্জনে সব সদস্যের একমত হওয়া দরকার। কারণ, চলমান কপ-২৬ সম্মেলনে ইইউ একটি একক সংস্থা হিসেবে দর-কষাকষি করবে।
ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, ২০১৮ সাল থেকে ইইউর কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রির নিচে রাখতে ইইউর নীতি ও পদক্ষেপ প্রায় যথেষ্ট।
ইইউ ২০৫০ সালের মধ্যে ‘কার্বন ডাই-অক্সাইড–নিরপেক্ষ’ হতে চায়।
রাশিয়া
মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনে যুক্তরাষ্ট্রের পরে রয়েছে রাশিয়া। দেশটির মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের পরিমাণ ১২ দশমিক ৫ টন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমেছিল। কিন্তু পরে দেশটির কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন বাড়ে।
দেশটির জিডিপির ২০ শতাংশের বেশি ফসিল জ্বালানি থেকে আসে।
রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম বড় মিথেন নির্গমনকারী দেশ। মিথেনের নির্গমন কমানোর ব্যাপারে চলমান জলবায়ু সম্মেলনে যে দেশগুলো অঙ্গীকার করেছে, তার মধ্যে রাশিয়া নেই।
ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, দেশটির নীতি ও পদক্ষেপ মোটেই যথেষ্ট নয়।
ভারত
দুই দশক ধরে ভারতের বার্ষিক কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। তবে শীর্ষ পাঁচের মধ্যে ভারতের মাথাপিছু কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন সবচেয়ে কম। এই সংখ্যা ১ দশমিক ৯ টন।
ধনী ও অধিক শিল্পোন্নত দেশগুলোকে নির্গমন কমানোর দায়দায়িত্ব বেশি পালন করতে বলছে ভারত। দেশটির যুক্তি, এই দেশগুলো দায়দায়িত্ব বেশি নিতে হবে এ কারণে যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে তারাই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে।
ভারত নির্গমন কমানোর একটা লক্ষ্য স্থির করেছে। তারা এই লক্ষ্যকে তুলনামূলক ন্যায়সংগত বলছে।
ভারতের বিদ্যুতের প্রায় ৭০ শতাংশ এখনো কয়লাভিত্তিক।
ক্লাইমেট অ্যাকশন ট্র্যাকার বলছে, লক্ষ্য অর্জনে ভারতকে ২০৪০ সালের আগেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ধাপে ধাপে বন্ধ করতে হবে।
নেট শূন্য নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ২০৭০ সাল নির্ধারণ করেছে ভারত। কিন্তু অন্য নির্গমনকারী দেশগুলোর তুলনায় এই সময়সীমা অনেক বেশি।