ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলে নিতে প্রথমে কিছুটা হোঁচট খেলেও দেশটির পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধে সফলতা পাচ্ছে রুশ বাহিনী। একের পর এক শহর দখল করে নিচ্ছে বাহিনীটি। গুরুত্বপূর্ণ লুহানস্ক অঞ্চলের বেশির ভাগ দখলে নেওয়ার পর এবার মস্কোর চোখ দোনেৎস্কের দিকে। এদিকে লুহানস্ক ‘জয়ে’ রুশ সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, লুহানস্কের গভর্নর সেরহি হাইদাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকার বলেছেন, লুহানস্ক দখলে নেওয়ার পর রাশিয়ার বাহিনীর এখন প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিবেশী দোনেৎস্কের পুরো অঞ্চল দখল করা। তারা সেটাই করতে যাচ্ছে।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল মূলত লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত। অঞ্চলটি মূলত রুশ অধ্যুষিত। ওই দুই অঞ্চলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে অনেক আগেই। রাশিয়া তাদের সহায়তা করছে বিভিন্নভাবে। তাই এই অঞ্চলে যুদ্ধে রুশ বাহিনী সফলতা পাবে, সেটা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। আবার অঞ্চলটি রাশিয়ার খুবই কাছে।
ইউক্রেনের নাগরিক হাইদাই বলেছেন, তিনি মনে করছেন, বিশেষ করে স্লোভিয়ানস্ক ও বাখমুত শহরে শিগগিরই হামলা শুরু করবে রাশিয়া। দনবাস অঞ্চলের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নেওয়া তাদের লক্ষ্য।
এর আগে রোববার লিসিচানস্ক শহর দখলের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্কের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে রাশিয়া। ইউক্রেন সরকারও শহরটি হাতছাড়া হওয়ার কথা স্বীকার করে।
আল–জাজিরা বলছে, লুহানস্ককে ‘মুক্ত’ করার জন্য রাশিয়ার সেনাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আজ সোমবার মস্কোতে প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে বৈঠকের পর পুতিন এই অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, লুহানস্ক যুদ্ধ যুক্ত সেনাদের বিশ্রাম দেওয়া উচিত। তবে যুদ্ধরত অন্যান্য ইউনিটকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।
এখন পুরো দোনেৎস্ক দখলের জন্য সেখানকার স্লোভিয়ানস্ক শহরে ‘প্রচণ্ড লড়াই’ শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে রুশ বাহিনীর হামলায় সেখানে ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জন। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ এ কথা জানিয়েছে।
লড়াই এখন ক্রমেই পূর্বাঞ্চলীয় শহর স্লোভিয়ানস্কের নিকটবর্তী হচ্ছে। সেখানকার বাসিন্দা ও সেনারা অত্যাসন্ন রুশ হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সেনা বলেন, প্রত্যেকেই জানেন, স্লোভিয়ানস্কে প্রচণ্ড এক লড়াই হবে।
রুশ হামলার শুরুতেই লড়াইয়ে যোগ দিয়েছেন ২৩ বছর বয়সী পেশায় এক হিসাবরক্ষক। এই ইউক্রেনীয় সেনা জানান, অগ্রসরমাণ রুশ সেনাবাহিনীর তুলনামূলক আধুনিক অস্ত্রের মোকাবিলায় ইউক্রেনীয় বাহিনীর সে ধরনের অস্ত্র নেই। করুণ হাসিতে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, সামনে কী পরিস্থিতি আসছে।’
এর আগে ২০১৪ সালে স্লোভিয়ানস্ক তিন মাসের মতো দখলে রেখেছিল রুশ–সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। স্বল্প সময়ের ওই নিয়ন্ত্রণকালে শহরটিতে ত্রাসের সৃষ্টি হয়। কয়েক ডজন সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিককে বন্দী করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটে।
শহরের মেয়র বলেন, স্লোভিয়ানস্কে হামলা তীব্রতর হচ্ছে। দিনে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচবার গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে গুচ্ছ বোমার ব্যবহারও বেড়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, গত রোববার স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরে গোলাবর্ষণ করেছে রুশ সেনাবাহিনী। খারকিভ শহরেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলায় মাল্টিপল লঞ্চার রকেট সিস্টেমের পাশাপাশি সোভিয়েত আমলের স্মের্চ রকেট ব্যবহার করা হয়।
রাতের ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, শুধু স্লোভিয়ানস্কেই ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইয়েভা নামের এক শিশুও রয়েছে। আগস্টে তার বয়স হতো ১০ বছর।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউক্রেনের শহরের পর শহর ধ্বংস করে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত স্মের্চ, উরাগান, গ্রাদ রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রাশিয়ার আছে। তারা এখন তাদের সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি দনবাসে জড়ো করছে।
লিসিচানস্ক দখলের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশী দোনেৎস্কে হামলা জোরদারে আরও ভূখণ্ড ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে রুশ বাহিনী। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তারা দোনেৎস্কের প্রায় অর্ধেক এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছিল বলে মনে করা হয়। তবে বর্তমানে তা কোন পর্যায়ে আছে, সেটা স্পষ্ট নয়।