ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনারা
ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদী সেনারা

লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ চলবে: রাশিয়া

ইউক্রেনে রুশ হামলার শুরুর ১০০তম দিন ছিল আজ শুক্রবার। এদিন রাশিয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে সামরিক কার্যক্রম চলবে। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ থামবে না। ইউক্রেন থেকে পিছপা হবে না মস্কো। অন্যদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর তাদের ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ দখলে নিয়েছে রাশিয়া। খবর এএফপি ও গার্ডিয়ানের।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউক্রেনে সামরিক কার্যক্রম গুটিয়ে নেবে না রাশিয়া। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত তা চলবে।’ ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের কথা উল্লেখ করে ক্রেমলিনের মুখপাত্র আরও বলেন, ‘এই দুই অঞ্চলের মানুষদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা চলমান রুশ সামরিক অভিযানের প্রধান লক্ষ্য। তাঁদের সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ফলাফলও পেয়েছি আমরা।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আফ্রিকান ইউনিয়নের (এইউ) চেয়ারম্যান ও সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সাল শুক্রবার রাশিয়ার সোচিতে বৈঠক করেন। এ বিষয়ে পেসকভ বলেন, ক্রমবর্ধমান খাদ্যসংকট ও সারের মজুদ কমে আসার বিষয়ে আফ্রিকার দেশগুলোর উদ্বেগ দুই নেতার আলোচনায় উঠে এসেছে। যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকা থাকা শস্যের কী হয়েছে, সেই বিষয়ে পুতিন এইউ চেয়ারম্যানকে জানান।

পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সেনেগালের প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের রাশ টানতে ভূমিকা রাখার অভিপ্রায়ে রাশিয়া সফর করছেন ম্যাকি সাল। এ ছাড়া তিনি খাদ্যশস্য ও সার প্রাপ্তির নিশ্চিয়তা চান। এ ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আফ্রিকার দেশগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হবে বলেও পুতিনকে জানান তিনি।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ আগামী সপ্তাহে তুরস্ক সফরে যাবেন। এ সময় ইউক্রেনের শস্য বিশ্ববাজারে রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে দেশ দুটির মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

রুশ সেনারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করে। এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের সূচনা হয়। এখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা বাদ দিয়ে পূর্বাঞ্চলের দনবাস দখলে নিতে লড়াই করছেন রুশ সেনারা। যুদ্ধের ১০০ দিনে ইউক্রেনে শত শত বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাজানো শহরগুলো।

চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ স্পষ্ট বিজয় দাবি করতে পারেনি। তবে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের মারিউপোল শহর দখলে নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। লক্ষ্য হিসেবে পুরো দনবাস দখলের কথাও বলেছে মস্কো।

এদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল বৃহস্পতিবার লুক্সেমবার্গের আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে ভার্চ্যুয়ালি দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ক্রিমিয়া ও দনবাসের একাংশসহ তাঁর দেশের ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ দখলে নিয়েছে রাশিয়া। রাশিয়ার রণসক্ষমতার সবটুকুই চলমান এ আগ্রাসনে ব্যবহার করা হয়েছে।

দনবাসের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে রুশ বাহিনী। যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া শহরটির বেশির ভাগ অংশ দখলে নিয়েছে এবং বিপুল গোলাবারুদ ব্যবহার করে স্থানীয়ভাবে সাফল্য অর্জন করছে তারা।

ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে পূর্বের শহর সেভেরোদোনেৎস্ক। গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেন, শহরটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে চাইছে রাশিয়া। তবে ইউক্রেনের সেনারাও জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত পাল্টা হামলা চালিয়ে যাবে।

এদিকে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টোলেনবার্গ। এ সময় ন্যাটোর প্রধান সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনের মিত্রদের একটি দীর্ঘমেয়াদি ও ভয়ংকর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চায় না ন্যাটো।