রুশ সেনাদের হটিয়ে সেভেরোদোনেৎস্কের কিছু অংশ পুনর্দখলের দাবি ইউক্রেনের

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে রুশ সেনারা
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ শহর সেভেরোদোনেৎস্কের কিছু অংশ পুনর্দখলে নেওয়ার কথা দাবি করেছে দেশটি। গত বৃহস্পতিবার লুহানস্কের মেয়র শেহরি হাইদাই বলেছিলেন, পূর্বাঞ্চলীয় এই শহরের ৭০ শতাংশ রাশিয়ার হাতে চলে গেছে। তবে এক দিন পরই গত শুক্রবার তিনি বলেন, তীব্র লড়াইয়ের পর রুশ সেনাদের হটিয়ে শহরটির ২০ শতাংশ এলাকা পুনর্দখল করা হয়েছে।

এদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার দাবি করেছে, তাদের বাহিনী ওডেসার কৃষ্ণসাগর বন্দরের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহনকারী ইউক্রেনের একটি সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ওডেসায় ধ্বংস করা হয়েছে ইউক্রেনের ভাড়াটে সেনাদের এক স্থাপনাও। এ ছাড়া সুমি অঞ্চলে সেনাবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের

সেভেরোদোনেৎস্ক শহরের কিছু অংশ পুনর্দখলে নেওয়ার দাবির আগেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কণ্ঠেও আশার সুর শোনা গেছে। তিনি রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে কিছু এলাকায় সফলতা পাওয়ার দাবি করেছেন। তবে যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, বর্তমানে মস্কোর মূল লক্ষ্য ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাস এলাকা দখল। এ লক্ষ্যে সেখানে বিমান হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া।

ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর ১০০তম দিন ছিল শুক্রবার। এদিন মস্কো জানায়, ইউক্রেনে তাদের সামরিক কার্যক্রম চলবে। চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ থামবে না। কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধ শুরুর পর তাদের ভূখণ্ডের ২০ শতাংশ দখলে নিয়েছে রাশিয়া।

তবে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, বিশ্বের দ্বিতীয় শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করার বিষয়টি অসম্ভব বলে মনে হলেও তাঁর সেনারা তা করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা প্রসঙ্গে বলেন, এটা যুদ্ধাপরাধ, লজ্জা ও ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বৃহস্পতিবার লুক্সেমবার্গের এমপিদের উদ্দেশে ভিডিও ভাষণ দেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, রাশিয়ার সম্মুখসারির যোদ্ধারা ইউক্রেনের এক হাজার কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছেন। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর রণসক্ষমতার সবটুকুই চলমান এ আগ্রাসনে ব্যবহার করা হয়েছে।

হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী

যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেছেন, দনবাসের সেভেরোদোনেৎস্ক শহরে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী। তারা এই শহরের বেশির ভাগ এলাকা দখলে নিয়েছে ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ব্যবহার করে সাফল্য অর্জন করছে।

আঞ্চলিক গভর্নর সেরহি হাইদাই বলেছেন, সেভেরোদোনেৎস্কের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সব দিক থেকেই ভাঙতে চাইছেন রুশ সেনারা। ইউক্রেনের সেনারাও পাল্টা হামলা চালাচ্ছেন। তাঁদের পাল্টা হামলা ঠেকাতে রুশ সেনারা শহরটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনকারী সেভেরস্কি ডোনেটস নদীর ওপর সেতু উড়িয়ে দিচ্ছেন।

রুশ সেনারা গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেন। এর মধ্য দিয়ে কয়েক দশকের মধ্যে ইউরোপে সবচেয়ে খারাপ সংঘাতের সূচনা হয়। এখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের চেষ্টা বাদ দিয়ে পূর্বাঞ্চলের দনবাস দখলে নিতে লড়াই করছেন রুশ সেনারা। যুদ্ধের ১০০ দিনে ইউক্রেনে শত শত বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাজানো শহরগুলো।

যুদ্ধের শততম দিন পূর্তিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি শুক্রবার জয়ের শপথ নেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরাই জয় পাব।’ ওই দিন রাতে দেওয়া এই বার্তায় তিনি আরও বলেন, প্রথম দিকে রুশ বাহিনীকে হুমকিস্বরূপ মনে হয়েছিল। পরে তাদের বিপজ্জনক মনে হয়েছে। তবে এখন রুশ বাহিনী কেবলই এক তিক্ত অভিজ্ঞতার নাম। কারণ, এই বাহিনী যুদ্ধাপরাধের মতো লজ্জাজনক কাজ করছে।

অন্যদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চলের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনে অত্যাধুনিক অস্ত্র পাঠিয়েছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেল আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানিতে রাজি পুতিন

জাতিসংঘ বলছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের শস্য বাইরে পাঠানোর অনুমতি দিতে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। এ ব্যাপারে আশার বাণী শুনিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও।

টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানিতে কোনো বাধা নেই। রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত মারিউপোল বন্দর, বার্দিইয়ানস্ক দিয়ে শস্য রপ্তানি হতে পারে।

ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানিতে রাশিয়া বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। শুক্রবার টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পুতিন বলেছেন, এমন দাবির মধ্য দিয়ে পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে হুংকার দিচ্ছে।

পুতিন আরও বলেন, খাদ্যশস্য বাইরের দেশে পাঠাতে কিয়েভের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দরগুলোকে বিশেষ করে ওডেসাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর জন্য কিয়েভকে ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন বন্দরগুলোর চারপাশের জলসীমাকে মাইনমুক্ত করতে হবে। এর বিনিময়ে রাশিয়া নিরাপদে জাহাজ চলাচলের সুযোগ করে দেবে।