রুশ জেনারেলদের হত্যায় ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী
ফাইল ছবি: এএফপি

ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ বাহিনীর ইউনিটগুলোর অবস্থান সম্পর্কে কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে এই যুদ্ধে নিহত অনেক রুশ জেনারেলকে লক্ষ্যবস্তু করা এবং হত্যার সুযোগ পায় ইউক্রেনীয় বাহিনী। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস এসব কথা জানিয়েছে।

ইউক্রেনের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁরা যুদ্ধের সম্মুখসারিতে প্রায় ১২ রুশ জেনারেলকে হত্যা করেছেন। এই যুদ্ধে এত জন রুশ জেনারেল নিহতের ঘটনা সমরবিদদের বিস্মিত করেছে।

রুশ জেনারেলদের লক্ষ্যবস্তু করার এই সহযোগিতা হলো ইউক্রেনকে যুদ্ধক্ষেত্রের সঠিক সময়ের গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের গোপন সহায়তা প্রচেষ্টারই অংশ। এসব গোয়েন্দা তথ্যের মধ্যে রয়েছে রুশ সেনাদের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েনের বিষয়টিও। পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে যুদ্ধ নিয়ে মস্কোর গোপন পরিকল্পনার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক মূল্যায়ন থেকে এ তথ্য নেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানান।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ফলে কতজন রুশ জেনারেল নিহত হয়েছেন, তা নির্দিষ্ট করে বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

রুশ সামরিক বাহিনীর অবস্থান এবং ভ্রাম্যমাণ সদর দপ্তরসহ অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য সরবরাহে জোর দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এসব ভ্রাম্যমাণ সদর দপ্তর বারবার স্থানান্তর করা হয়ে থাকে।

নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্যের সঙ্গে এসব অবস্থানগত তথ্যের সমন্বয় করেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে রয়েছে যোগাযোগে আড়ি পাতা, যা জ্যেষ্ঠ রুশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সতর্কবার্তা দেয়। এভাবে অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গোলাবর্ষণ ও অন্যান্য হামলা চালানো হলে রুশ কর্মকর্তারা নিহত হন।

এই প্রতিবেদন তৈরিতে ইউক্রেনকে দেওয়া অতিগোপনীয় গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে যেসব কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, তাঁরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।

যুদ্ধক্ষেত্রের অধিকাংশ গোয়েন্দা তথ্যই প্রশাসন গোপন রাখতে চেয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এটাকে উসকানি হিসেবে দেখা হবে এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধের পরিধি আরও বাড়াতে প্ররোচিত করবে। এ ছাড়া উচ্চপদস্থ রুশ জেনারেলদের অবস্থান সম্পর্কে ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিরত থেকেছে বলেও দাবি করা হয়েছে।

কীভাবে রুশ সেনাদের সদর দপ্তর থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কিছু বলেননি মার্কিন কর্মকর্তারা। তাঁদের আশঙ্কা, এতে তাঁদের তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াগুলো ঝুঁকিতে পড়বে। তবে যুদ্ধের গোটা সময়টাতে গোপন ও বাণিজ্যিক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে রুম সেনাদের চলাফেরার তথ্য সংগ্রহসহ বিভিন্ন উৎসকে কাজে লাগায় মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

ইউক্রেনকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহের বিষয়ে জানতে চাইলে পেন্টাগনের মুখপাত্র জন এফ কিরবি বলেন, ‘আমরা এসব তথ্যের বিস্তারিত নিয়ে কথা বলব না।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সাধারণ তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা করছে যাতে, তারা নিজেদের রক্ষায় তা কাজে লাগাতে পারে।

ন্যাটোতে কিয়েভের যোগ দেওয়ার পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ হয়ে রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে। হামলার পর থেকে ইউক্রেনকে অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো। এতে যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীর তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে রুশ বাহিনী। তাদের একাধিক জেনারেল নিহতের বিষয়টি স্বীকার করেছে মস্কো।