পেন্টাগনের সাবেক শীর্ষ উপদেষ্টা বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে পরাজিত করার লক্ষ্যপূরণে অনেকটাই এগিয়েছে রাশিয়া। তবে পশ্চিমা দেশের সরকারপ্রধানেরা ভুলবশত মনে করছেন, দুর্বলতার কারণে ও যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে অস্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে রাশিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে। খবর স্পুতনিকের।
যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল ডগলাস ম্যাকগ্রেগর সম্প্রতি বামধারার সংবাদ সংস্থা ও ব্লগ ‘গ্রেজোন’কে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন। ওই সাক্ষাৎকারে ম্যাকগ্রেগর বলেন, হামলার শুরু থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বেসামরিক নাগরিকদের হতাহত ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে কড়া নির্দেশনা দেন। এ কারণে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
পশ্চিমারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইউক্রেনের অধিবাসীদের মনে মিথ্যে আশা জাগিয়ে তুলছে। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এমনভাবে সংবাদ প্রচার করছে, যাতে মনে হতে পারে রাশিয়া ইউক্রেনে পরাজিত হতে চলেছে। তবে প্রকৃত অবস্থা এর উল্টো।
ম্যাকগ্রেগর বলেন, যুদ্ধের সব দিক ও উদ্দেশ্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। হামলার প্রথম দিন থেকে রাশিয়ার উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনের সেনাবাহিনীকে পুরোপুরি ধ্বংস করা। আর রাশিয়া তার লক্ষ্যপূরণে অনেকটাই এগিয়েছে।
তবে ম্যাকগ্রেগর মনে করেন, এসব অনুরোধ, উপরোধে খুব বেশি লাভ হবে না। যুদ্ধবিরতির আলোচনা ও শান্তিচুক্তি কার্যকরে জেলেনস্কি উদ্যোগ না নিলে ইউক্রেনে আরও বেশি মানুষের প্রাণ যাবে।
ম্যাকগ্রেগর আরও বলেন, হামলার প্রায় এক মাস হতে চলেছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এখনো সক্রিয়। তবে তাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছে, বিভিন্ন শহরে তারা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, দোনেৎস্ক সীমান্তে ৬০ হাজার ইউক্রেনীয় সেনা রয়েছেন। তবে তাঁদের রসদ এখন ফুরিয়ে আসছে।
যুদ্ধের খবর সংগ্রহকারী পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এসব সত্য তথ্য প্রকাশ করছে না। পশ্চিমা গণমাধ্যম প্রমাণ করতে চাইছে রুশ সেনাবাহিনী অপটু। কয়েকজন মার্কিন সিনেটর এর কারণ হিসেবে বলেন, রুশ বাহিনী কিয়েভ দখল করতে পারেনি।
কিয়েভ দখল না করতে পারাকে ন্যাটো ও নো–ফ্লাই জোনের সমর্থকেরা রাশিয়ার ব্যর্থতার অজুহাত হিসেবে তুলে ধরেন। যাঁরা কিয়েভে আরও বেশি অস্ত্র পাঠাতে ইচ্ছুক তাঁরাও এই খোঁড়া যুক্তি ব্যবহার করেন।
ম্যাকগ্রেগর গ্রেজোনকে আরও বলেন, এটা খুবই স্পষ্ট যে ওয়াশিংটন চায় আরও বেশি দিন পর্যন্ত যুদ্ধ চলুক। কারণ, ওয়াশিংটন রাশিয়ায় আরও বিপর্যয় চায়। তবে এমনটা ঘটছে না।
এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পশ্চিমা দেশগুলো কোনো সত্যই প্রকাশ করছে না। পশ্চিমা গণমাধ্যম ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সফল ভাবমূর্তি উপস্থাপন করতে চায়, তবে সেটা সত্য নয়। ম্যাকগ্রেগর আরও বলেন, ‘প্রতিদিন টিভিতে আমি বারবার যে মিথ্যা শুনি, তা হলো রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। তবে এমন বক্তব্য উদ্ভট, কাণ্ডজ্ঞানহীন।
ম্যাকগ্রেগর গ্রেজোনকে আরও বলেন, এটা খুবই স্পষ্ট যে ওয়াশিংটন চায় আরও বেশি দিন পর্যন্ত যুদ্ধ চলুক। কারণ, ওয়াশিংটন রাশিয়ায় আরও বিপর্যয় চায়। তবে এমনটা ঘটছে না।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধবিমান, বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ও অন্যান্য অস্ত্র কিয়েভে পাঠাতে বারবার মার্কিন কংগ্রেসের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনের আকাশ নো–ফ্লাই জোন করতেও অনুরোধ করেছেন।ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যাতে রাশিয়াকে পরাজিত করতে পারে, সে জন্য তিনি এমনটা করেছেন। গত সপ্তাহে কানাডার আইনপ্রণেতাদের কাছেও একই অনুরোধ জানিয়েছেন জেলেনস্কি।
তবে ম্যাকগ্রেগর মনে করেন, এসব অনুরোধ, উপরোধে খুব বেশি লাভ হবে না। যুদ্ধবিরতির আলোচনা ও শান্তিচুক্তি কার্যকরে জেলেনস্কি উদ্যোগ না নিলে ইউক্রেনে আরও বেশি মানুষের প্রাণ যাবে।