গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে হামলার নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর গোলাগুলি, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ চলছে। দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। দেশবাসীকে যুদ্ধে নামার আহ্বান ও করণীয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। দুই দেশের চলমান সংঘাত শুরুর পর জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে নতুন এক জনমত জরিপে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে এ জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে ইউক্রেনের মানুষের কাছে জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা তিন গুণ বেড়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, যুদ্ধ চলাকালে জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য জরিপটি করেছে রেটিং সোশিওলজিক্যাল নামের একটি গোষ্ঠী। তাতে দেখা যায়, জরিপে অংশ নেওয়া ৯১ শতাংশ মানুষ জেলেনস্কিকে সমর্থন করছেন। তাঁকে সমর্থন করেন না ৬ শতাংশ। আর ৩ শতাংশ সিদ্ধান্তহীনতায়।
ইউক্রেনজুড়ে দুই হাজার মানুষের মতামতের ভিত্তিতে জরিপটি করা হয়েছে। তবে এতে রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়া ও বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের কেউ ছিলেন না। রাশিয়ার আগ্রাসন প্রতিহত করার সুযোগ কতটুকু—জরিপে অংশগ্রহণকারীর কাছে জানতে চাওয়া হলে ৭০ শতাংশ বলেন, তাঁদের বিশ্বাস, প্রতিহত করা সম্ভব। জরিপে দেখা যায়, রুশ আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর শুধু ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ নয়, দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও জেলেনস্কির জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর বারবার আলোচনায় এসেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলনস্কি। তবে রাশিয়ার মতো অতি বৃহৎ ও সামরিক ক্ষমতাধর এক দেশের আগ্রাসনের মুখে দেশকে রক্ষা করার দৃঢ়চেতা মনোভাবের কারণে তিনি প্রশংসা কুড়িয়েছেন। অনলাইনে এসে বারবার কিয়েভ ছেড়ে পালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ইউক্রেন থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা দেশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
জেলেনস্কি শুরু থেকেই বলে আসছেন, রাশিয়া যতই হামলা করুক, তিনি দেশ ছেড়ে যাবেন না। যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে ভলোদিমির জেলেনস্কিকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব সাড়া না দিয়ে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘এখানে এখন লড়াই হচ্ছে, আমার গোলাবারুদ দরকার, আমাকে সরিয়ে নেওয়ার দরকার নেই।’
এ ছাড়া রাশিয়া একাধিকবার দাবি করেছে জেলেনস্কি পালিয়েছেন। তবে তিনি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত অবস্থান জানাচ্ছেন। রোববার নতুন ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, তিনি রাজধানী কিয়েভেই আছেন, লড়াই করছেন। অস্ত্র ছাড়বেন না এবং দেশকে রক্ষা করবেন বলে ভিডিও বার্তায় জানান তিনি।
ভিডিও বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘শুনুন, আমি এখানেই আছি। আমরা অস্ত্র ফেলে দেব না। আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করব। কারণ, আমাদের কাছে এখন আমাদের অস্ত্রই সত্য। একই সঙ্গে আমাদের ভূমি, আমাদের দেশ ও আমাদের সন্তান সত্য এবং আমরা এগুলোর সবকিছুকেই রক্ষা করব।’
নিজের অবস্থানের প্রমাণ দিতে গত শুক্রবারও একটি ভিডিও বার্তা দেন তিনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের বাসভবন গরোদেৎস্কি হাউসের সামনের ওই ভিডিওতে জেলেনস্কিকে বলতে শোনা যায়, ‘অনলাইনে এখন অনেক ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে, আমি নাকি সেনাবাহিনীকে অস্ত্র সমর্পণের নির্দেশ দিয়েছি ও নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু আমি এখানেই আছি। আমরা অস্ত্র ছাড়ব না। আমরা আমাদের দেশকে রক্ষা করব।’ তার ওই ভিডিও বার্তা অনলাইনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
জেলেনস্কি (৪৪) রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে ইউক্রেনে একজন জনপ্রিয় টিভি কৌতুকাভিনেতা ছিলেন। ২০১৯ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে বলেছিলেন, তিনি জয়ী হয়েছেন। কারণ মানুষ তাঁর ‘সিনড্রেলা স্টোরি’ দেখে ভেবেছে একজন সাধারণ মানুষও দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারে।