পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি নিয়ে সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যেই এবার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি বৈঠক বাতিল করেছে ফ্রান্স। চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। আজ সোমবার যুক্তরাজ্যের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
বৈঠকে অংশ নেওয়ার কথা ছিল ফ্রান্সে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের সাবেক রাষ্ট্রদূত লর্ড রিকেটসের। তিনি জানান, ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসের মধ্যে দুই দিনব্যাপী ওই বৈঠক আপাতত হচ্ছে না। পরবর্তী কোনো সময় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে চুক্তি হয়। এইউকেইউএস নামের এই চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রযুক্তি সরবরাহ করবে ওই দুই দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার এ চুক্তির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফ্রান্স। কারণ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দেশটির সাবমেরিন-সংশ্লিষ্ট একটি চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির আর্থিক মূল্য চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
এসবের কারণে ত্রিদেশীয় এ চুক্তি নিয়ে চটেছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান একে ‘পেছন থেকে ছুরি মারার মতো’ বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষ্য, মিত্রদের মধ্যে এমন ব্যবহার একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। নতুন নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাসভঙ্গ ও অপমানজনক আচরণ করেছে বলেও গত শনিবার মন্তব্য করেছেন তিনি।
এর আগে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায় ফ্রান্স। বর্তমান পরিস্থিতির পুনরায় মূল্যায়ন করতেই তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ত্রিদেশীয় নিরাপত্তা চুক্তির আরেক অংশীদার যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফিরতে বলা হয়নি। এ নিয়ে জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানোর কোনো মানে হয় না। দেশটিকে ‘সুযোগসন্ধানী’ বলে আখ্যায়িত করেন তিনি।
২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ফ্রান্সের নৌযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নেভাল গ্রুপের কাছ থেকে তারা নতুন সাবমেরিন তৈরি করে নেবে। নতুন এই সাবমেরিন প্রতিস্থাপিত হবে পুরোনো কলিন্স সাবমেরিনের জায়গায়। গত জুনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলেন, তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও দুই দেশের মধ্যে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার কথা বলেছিলেন।
দুই সপ্তাহ আগেও অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছিলেন, তাঁরা ফ্রান্সের কাছ থেকেই এ সাবমেরিন তৈরি করে নেবেন। কিন্তু দুই সপ্তাহের ব্যবধানে হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে অস্ট্রেলিয়া।