মেগান মনে করালেন ডায়ানার গল্পগুলো

প্রিন্সেস ডায়ানা
 ছবি: এএফপি

দুটি সাক্ষাৎকার। একটি ১৯৯৫ সালে প্রচারিত হয়। অন্যটি ২০২১ সালে। প্রথমটিতে অংশ নেন প্রিন্সেস ডায়ানা। আর সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে তাঁরই সন্তান প্রিন্স হ্যারির স্ত্রী মেগান মার্কেল। মাঝে ২৬ বছর পেরিয়েছে। তবে দুটি সাক্ষাৎকারের গল্পগুলো যেন একই রয়ে গেছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ২৬ বছরের ব্যবধানে হওয়া দুটি সাক্ষাৎকারের মিলটি হলো—দুটিতেই রাজবধূরা শুনিয়েছেন ব্রিটিশ রাজপরিবারের কড়া নিয়মের বেড়াজালে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়ার কথা। দুই প্রজন্মের দুই নারীর কষ্টের গল্পগুলো একটুও বদলায়নি। একইভাবে ভিন্নতা আসেনি রাজতন্ত্রের আচরণে, ঔদ্ধত্যে। তাই মেগানের সাক্ষাৎকারের প্রতিটি শব্দ মনে করিয়ে দিয়েছে প্রয়াত ডায়ানার কথা। মেগানে মিলেছে ডায়ানার ছায়া।  

বিবিসির তুমুল জনপ্রিয় অনুষ্ঠান প্যানোরমা। ১৯৯৫ সালে তাতেই অংশ নিয়েছিলেন প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানা। বিখ্যাত সাংবাদিক মার্টিন বশিরকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারটি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। ২ কোটি ৩০ লাখ ব্রিটিশ নাগরিক টিভির পর্দায় সাক্ষাৎকারটি দেখেন। এটি ছিল ওই সময় ব্রিটেনের মোট জনসংখ্যার ৩৯ দশমিক ৩ শতাংশ। সেই সাক্ষাৎকারের পরতে পরতে কষ্টের গল্প শুনিয়েছিলেন ডায়ানা। তাতে মা–বাবার বিবাহবিচ্ছেদ থেকে শুরু করে তাঁর বেড়ে ওঠা, বিয়ে, বাইরে থেকে এসে রাজপরিবারের একজন সদস্য হয়ে ওঠার লড়াই, প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের কষ্ট, মাতৃত্বকালীন ঝড়ঝাপটা, অবসাদ প্রভৃতি নানা বিষয়ে অকপট ছিলেন ডায়ানা। উঠে এসেছিল রাজপরিবারের অভ্যন্তরীণ নানা বঞ্চনা ও অন্যায়ের গল্প।

ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরের বছরই বিবাহবিচ্ছেদ হয় ডায়ানার। তারও এক বছর পর প্যারিসে এক রহস্যময় সড়ক দুর্ঘটনায় মাত্র ৩৬ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
অন্যদিকে জনপ্রিয় মার্কিন উপস্থাপক অপরাহ উইনফ্রেকে দেওয়া বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি কথা বলেছেন হ্যারি ও মেগান দম্পতি। ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে সিবিএস টিভিতে সাক্ষাৎকারটি প্রচার করা হয়। ‘অপরাহ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: এ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের এই বিশেষ টিভি শোটি যুক্তরাজ্যের আইটিভিতে স্থানীয় সময় সোমবার রাতে প্রচার করা হবে।

এ সাক্ষাৎকারে কয়েক শ বছরের পুরোনো ব্রিটিশ রাজপরিবার সম্পর্কে অনেক অজানা ও অপ্রিয় কথা শুনিয়েছেন হ্যারি–মেগান দম্পতি। ডাচেস অব সাসেক্স মেগান জানিয়েছেন, প্রাসাদে তাঁর তিক্ত অভিজ্ঞতার গল্প, যা ডায়ানার জীবনের গল্পগুলোর সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়।

ডায়ানার মতো মেগানও বিবাহসূত্রে রাজপরিবারের সদস্য হয়েছেন। বহিরাগত একজনের রাজতন্ত্রের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার লড়াইয়ের তিক্ত গল্পটাও দুজনের একই। মেগানের ভাষ্যে উঠে এসেছে রাজতন্ত্রের বর্ণবাদী ও কর্তৃত্বপরায়ণ আচরণের কথা। বলেছেন ব্যক্তিজীবনে রাজপরিবারের অযাচিত হস্তক্ষেপের গল্প। জানা গেছে মেগানের অনাগত সন্তান ‘কতটা কালো হবে’—তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার মতো চাঞ্চল্যকর সব ঘটনা।

পরিবারের মধ্যে থেকেও ডায়ানার মতোই নিঃসঙ্গতা ও হতাশায় ভরা মেগানের অভিজ্ঞতাও। তীব্র অবসাদ কুরে খেয়েছে দুজনকেই। অবসাদ থেকে ডায়ানা নিজের ওপর অত্যাচার করার গল্প শুনিয়েছিলেন বিবিসির সাক্ষাৎকারে। আর এখন মেগানের অকপট স্বীকারোক্তি, ‘বেঁচে থাকার ইচ্ছেই চলে গিয়েছিল। জীবন অবিশ্বাস্য রকমের কঠিন হয়ে উঠেছিল। হ্যাঁ, আমি আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম।’

মেগান মার্কেল

ডায়ানা তাঁর সৌন্দর্য, মানবিক গুণাবলি ও সাধারণের সঙ্গে সহজে মিশে যাওয়ার প্রবণতার কারণে বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ধনী–গরিবনির্বিশেষে সবার প্রিয় ‘প্রিন্সেস’ ছিলেন তিনি। বিশ্বজুড়ে ছুটে বেড়িয়েছেন, অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাধারণের মধ্যে তাঁর এ জনপ্রিয়তা ওই সময় ভাবিয়ে তুলেছিল রাজপরিবারকে।

মেগান বিয়ের আগেই অভিনেত্রী হিসেবে সুনাম কুড়ান। সিএনএন বলছে, জনপ্রিয়তা ও সাধারণের সঙ্গে মিশে যাওয়ার সক্ষমতা তাঁর ডায়ানার সমতুল্য না হলেও দুজন একই পথের যাত্রী। রাজপরিবারে তাই মেগান ছিলেন ডায়ানার ছায়ার মতোই। সাক্ষাৎকারে অপরাহকে হ্যারি জানিয়েছেন, মেগান ও রাজপরিবারের মধ্যে সম্পর্কের মোড় পাল্টে যায় অস্ট্রেলিয়ায় তাঁদের সফরের পর। সেখানে সাধারণ মানুষ ও কমনওয়েলথের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মেগান যেভাবে নির্দ্বিধায় মিশে গিয়েছিলেন, তাতে রাজপরিবারের সদস্যরা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়েন।

তবে ডায়ানা–মেগানের মধ্যে এক জায়গায় তফাত রয়েছে। ডায়ানা পুরো লড়াইটা একাই লড়েছেন। অন্যদিকে মেগান পাশে হ্যারিকে পেয়েছেন। প্রিন্স হ্যারি ও তিনি পাকাপাকিভাবে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেছেন এবং রাজপরিবার ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে থিতু হয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের প্রিন্স হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান মার্কেল সাক্ষাৎকার দেন মার্কিন টিভি উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রেকে

ডায়ানার সেই সাক্ষাৎকারে বিশ্ববাসীর সামনে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের জৌলুশপূর্ণ জীবনের আড়ালে প্রাসাদে নারীদের অবর্ণনীয় কষ্টের গল্প প্রকাশিত হয়ে পড়ে। ডায়ানার রহস্যময় দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পেছনে ওই সাক্ষাৎকার অন্যতম অনুঘটক ছিল বলে অভিযোগ করেন অনেকে।

এদিকে মেগানের সম্ভাব্য পরিণতি ডায়ানার মতোই হতে পারত, এমন আশঙ্কা খোদ প্রিন্স হ্যারির। অপরাহকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে আমি মেগানের মধ্যে মায়ের পরিণতি দেখতে পাচ্ছিলাম।’