বড় যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ছে

মহড়ায় ইউক্রেনের সেনারা
ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে টানা দুই দিন ধরে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনী ও রুশপন্থী বিদ্রোহীরা পরস্পরের ওপর গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় ওয়াশিংটন এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা আশঙ্কা করছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের অজুহাত হতে পারে এটি। তবে রাশিয়া পশ্চিমাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, তারা ইউক্রেন আক্রমণের সর্বাত্মক পরিকল্পনা করছে না।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সালে পূর্ব ইউরোপে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। এরপর থেকে গত দুই দিনের তীব্র গোলাবর্ষণ সবচেয়ে বড় লড়াইয়ের ঘটনা।

এ সপ্তাহে মস্কোর পক্ষ থেকে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা এসেছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলো মস্কোর এ ঘোষণা বিশ্বাস করতে পারেনি। তাদের অভিযোগ, মস্কো সেনা প্রত্যাহার না করে আরও বেশি সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম সীমান্তে জড়ো করেছে। এ ধরনের আয়োজন সাধারণ যুদ্ধ শুরুর লক্ষণ।

রয়টার্স বলছে, যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক আর্থিক বাজার বিপর্যস্ত। এ ছাড়া বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ও মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াও ব্যাহত হতে পারে। তবে আগামী সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে সাক্ষাতের ঘোষণায় কিছুটা স্বস্তি দেখা গেছে।

বৃহস্পতিবার থেকে রুশপন্থী বিদ্রোহীদের সঙ্গে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর লড়াই শুরু হলে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের শঙ্কা সৃষ্টি হয়। এখন পর্যন্ত এ লড়াইয়ে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া না গেলেও দুই পক্ষের গোলাগুলি বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। কূটনৈতিক সূত্র বলছে, শুক্রবার সকালে ৬০০টির বেশি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, যা বৃহস্পতিবারের চেয়ে ১০০টি বেশি। সূত্র বলছে, তারা সবার ওপর এমনকি সবকিছুর ওপর গুলি চালাচ্ছে। ২০১৪-২০১৫ সালেও এ রকম দেখা যায়নি। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে এ পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ‘বিপজ্জনক’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ব্লিঙ্কেন বলেছেন, ওয়াশিংটনের ধারণা, রাশিয়া সর্বাত্মক আক্রমণের পরিকল্পনা করছে। অজুহাত তৈরির মাধ্যমে এ আক্রমণ শুরু করতে পারে। সম্ভবত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সংঘর্ষের অভিযোগে তারা আক্রমণ চালাবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মিত্রদের একত্র করে গতকাল একটি বৈঠক করেছেন। বৈঠকে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, পোল্যান্ড ও রোমানিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর প্রতিনিধিরা যুক্ত হন।

ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে একে ‘পশ্চিমা বিলাপ’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মস্কো শুক্রবার বলেছে, ইউক্রেনের সীমান্তের কাছ থেকে একটি ট্যাংক ইউনিটসহ আরও দুটি যান্ত্রিক পদাতিক ইউনিটকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মস্কোর পক্ষ থেকে তাদের নিরাপত্তা দাবির পাশাপাশি ইউক্রেনে ন্যাটোর সদস্য না করার দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে কূটনীতিক বহিষ্কার নিয়ে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। রাশিয়ার একজন কূটনীতিককে বহিষ্কারের জবাবে রাশিয়া দুজন মার্কিন কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।

তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে রাশিয়ার শিগগিরই আক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভ শুক্রবার পার্লামেন্টে বলেছেন, ‘আমাদের গোয়েন্দারা সম্ভাব্য হুমকির প্রতিটি পদক্ষেপ খেয়াল রাখছে। আমাদের ধারণা, বড় ধরনের লড়াইয়ের আশঙ্কা কম।’

ইউক্রেন সীমান্তে ধারণার চেয়ে সেনাসংখ্যা বেশি

দ্য গার্ডিয়ান-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, ইউক্রেনের সীমান্তে রুশ সৈন্যের সংখ্যা আগের ধারণার তুলনায় অনেক বেশি। ইউরোপে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা সংস্থার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল কার্পেন্টার ওএসসিইর এক বৈঠকে বলেছেন, ‘আমাদের মূল্যায়ন অনুযায়ী ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার সেনা জড়ো করেছে রাশিয়া। জানুয়ারির ৩০ তারিখ পর্যন্ত তা ছিল ১ লাখের মতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় সেনা সমাবেশ।’

মস্কো সফরে লুকাশেঙ্কো

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কো, রাশিয়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি

শুক্রবার রাশিয়া সফরে এসেছেন বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো। তিনি তাঁর দেশে রাশিয়ার সেনা উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছে, বেলারুশে মহড়া শেষ হলেও শিগগিরই সেখান থেকে রাশিয়ার সেনা সরানো হচ্ছে না। লুকাশেঙ্কো বলেছেন, যত দিন প্রয়োজন, তত দিন সেখানে সেনারা অবস্থান করবেন।

ইউরোপে সেনা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ইউক্রেন সীমান্তবর্তী ন্যাটো দেশগুলো শক্তিশালী করার জন্য অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন পোল্যান্ড সফরকালে গতকাল বলেছেন, ওয়ারশর কাছে ২৫০টি অ্যাব্রাম ট্যাংক বিক্রি করবে তারা।