বেলজিয়ামে অফিস শেষে কর্মীদের কাজের বার্তা দিতে পারবেন না ঊর্ধ্বতনেরা

প্রতীকী ছবি
 ছবি: এএফপি

বেলজিয়ামে সরকারি কর্মীদের নির্ধারিত দৈনিক কর্মঘণ্টা শেষ হয়ে যাওয়ার পর অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার করা ফোনকল কিংবা ই–মেইলের জবাব আর দিতে হচ্ছে না তাঁদের। নতুন এক আইনের আওতায় দেশটির প্রায় ৬৫ হাজার সরকারি কর্মী তাঁদের ব্যক্তিজীবন থেকে কর্মজীবনকে বিচ্ছিন্ন রাখার অধিকার পেলেন। গত মঙ্গলবার থেকে দেশটিতে এ আইন কার্যকর হয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনপিআরের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বেলজিয়ামের জনপ্রশাসনমন্ত্রী পেত্রা দু সুতা এক চিঠিতে লিখেছেন, সরকারি কর্মচারীদের অতিরিক্ত কাজের চাপ কমাতে এ আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

নতুন নিয়মের আওতায় কর্মঘণ্টা শেষ হয়ে যাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন কাজ করা কর্মীদের সঙ্গে আর অফিস থেকে যোগাযোগ করা যাবে না। তবে পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে পরের দিনের কর্মঘণ্টা শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা যাচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটবে। শ্রমিক সংঘ (ইউনিয়ন) ও প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপকেরা মিলে বিশেষ পরিস্থিতিগুলো নির্ধারণ করবেন। তবে দে সুতা বলেছেন, কর্মীদের পরিবার, তাঁদের বিশ্রাম ও ছুটি নিশ্চিতের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানকে শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।

নতুন বিধি অনুযায়ী কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পর ঊর্ধ্বতনদের ফোনকলে সাড়া না দিলে কিংবা তাঁদের পাঠানো কাজসংক্রান্ত বার্তা না পড়লে কোনো কর্মীকে সাজা দেওয়া যাবে না।

বেলজিয়ামে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর অনেকে বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যুক্ত হচ্ছেন। এ ধারা সামনেও অব্যাহত থাকতে পারে। এমন অবস্থায় যেন তাঁদের ব্যক্তিজীবনের ওপর কর্মজীবনের প্রভাব না পড়ে তা নিশ্চিত করতে জারি হয়েছে নতুন বিধি।
বিডিও ইন্টারন্যাশনাল বেলজিয়ামের করা পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৮৪ শতাংশ (৪০ শতাংশ ব্যবস্থাপক পদে আছেন) মানুষ বলেছেন, মহামারি শেষ হওয়ার পর তাঁরা সপ্তাহে দুই কিংবা তার চেয়ে বেশি দিন বাড়িতে থেকে কাজ করতে চান। যাতায়াতব্যবস্থার সংকটের কথা বলে এমন প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা। এ কর্মীরা মনে করেন, এতে উৎপাদন বাড়বে। তবে জনপ্রশাসনমন্ত্রী দে সুতা এর খারাপ দিকটাও দেখছেন।

দে সুতা বলেন, ‘এ ক্ষেত্রে সব সময় কম্পিউটার চালু করে রাখতে হয়, সারাক্ষণ স্মার্টফোনে আসা ই–মেইলগুলো পড়তে হয়। জনগণকে এর থেকে মুক্ত করতে আমরা তাঁদের বিচ্ছিন্ন থাকার আইনি অধিকার দিচ্ছি।’

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর্মীদের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হলেও দে সুতা চান না, কর্মীরা কাজের ক্ষেত্রে যে নমনীয়তা চাইছেন, তা বাধাগ্রস্ত হোক।

বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীর মুখপাত্র লাওরেন্স টিয়ারলিংক দ্য ব্রাসেলস টাইমসকে বলেন, বেসরকারি খাতেও এ বিধি কার্যকরের প্রস্তুতি চলছে।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ণকালীন কর্মীদের জন্য চার দিনের কর্ম সপ্তাহ চালু করার প্রস্তাব বিবেচনা করছে। এ ক্ষেত্রে মোট কর্মঘণ্টা ৩৮ ঘণ্টা থেকে বেড়ে ৪০ ঘণ্টা হতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইউরোপের আরও কিছু দেশে কর্মজীবন ও ব্যক্তিজীবনের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় একই ধরনের বিধি কার্যকর করতে দেখা গেছে। এর আগে গত বছর পর্তুগালে কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পর কর্মীদের কাছে ঊর্ধ্বতনদের বার্তা পাঠানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।