বুচা শহরে রাশিয়ার ‘যুদ্ধাপরাধ’ তদন্তের দাবি ইউক্রেনের

ইউক্রেনের বুচা শহরে রাশিয়ার বিধ্বস্ত সাঁজোয়া যান ও ট্যাংকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা
ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী বুচা শহরে গণকবরের সন্ধান পাওয়ার বিষয়টিকে রুশ বাহিনীর ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে দেখছে ইউক্রেন। এ ঘটনায় রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের প্রমাণ খুঁজতে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। তবে রাশিয়া বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বুচা থেকে রুশ সেনারা চলে যাওয়ার পর শহরটির মেয়র আনাতোলি ফেদোরুক জানান, শহরের সড়কে মরদেহ পড়ে রয়েছে। এমনকি ২৮০ জনকে গণকবরে সমাহিত করা হয়েছে। তাঁদের অনেককেই খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করেছেন রুশ সেনারা।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে বুচায় রাশিয়ার ‘যুদ্ধাপরাধ’ তদন্ত ও প্রমাণ সংগ্রহের আহ্বান জানায়। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত তদন্তের উদ্যোগ নিলে তাতে সমর্থন ও সহায়তা দেবে দেশ দুটি।

কিয়েভের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার উত্তর–পশ্চিমে বুচার অবস্থান। রয়টার্সের প্রতিনিধি শহরটির সড়কের পাশে মাথায় গুলিবিদ্ধ একজনের মরদেহ পরে থাকতে দেখেছেন। ওই ব্যক্তির হাত পেছনে বাঁধা ছিল। শহরটির ডেপুটি মেয়র তারাস শাপরাভস্কি জানান, গত সপ্তাহের শেষের দিকে রুশ বাহিনী শহর ছেড়ে যাওয়ার পর অন্তত ৫০ জন বেসামরিক মানুষের মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। তাঁরা সবাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা এসব ঘটনাকে ‘ইচ্ছাকৃত গণহত্যা’ বলে মন্তব্য করেছেন। অন্যদিকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মুখপাত্র সের্গেই নিকিফোরোভ বলেছেন, বুচা শহরে রুশ বাহিনী বেসামরিক মানুষকে নির্বিচার হত্যা করেছে। এটা যুদ্ধাপরাধের শামিল।

এদিকে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল বলেছে, ইউক্রেনের চেরনিহিভ, খারকিভ ও কিয়েভ অঞ্চলে রুশ সেনাদের যুদ্ধসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অনেক প্রমাণ তাদের হাতে এসেছে।

রয়টার্সের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আর বেসামরিক নাগরিক হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়াও। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বুচায় রুশ সেনাদের ‘অপরাধের’ ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ইউক্রেন সরকার উসকানিমূলক কাজ করছে। শহরটির একজন বেসামরিক মানুষও রুশ বাহিনীর হাতে নিগৃহীত হয়নি।

যদিও স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবি ভিন্ন কথা বলছে। এসব ছবিতে সেখানকার একটি গির্জার উঠানে ৪৫ ফুট লম্বা পরিখা খননের প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেখানেই গত সপ্তাহের শেষ দিকে একটি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ এসব বেসামরিক নাগরিক হত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও তাঁর অনুসারীরা এর পরিণতি অনুভব করতে পারবেন।’ ওলাফ শলৎজ আরও বলেন, বেসামরিক মানুষকে নির্বিচার হত্যা করায় পশ্চিমা জোট আগামী দিনগুলোয় রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা দেবে বলে তিনি মনে করছেন।