ইউক্রেনে রুশ হামলার পর মস্কোর বিরুদ্ধে একের পর এক পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। দাম বেড়েছে গমসহ বিভিন্ন শস্য ও খাবারের। এ পরিস্থিতিতে পরবর্তী মৌসুমে শস্য উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে রাশিয়া।
দেশটি বলেছে, বাড়তি উৎপাদিত শস্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা হবে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে চলমান খাবারে সংকট কমে আসবে। এমনকি মস্কোর ওপর থেকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে ইউক্রেনের শস্য রপ্তানির সুযোগ দেওয়ার কথাও জানিয়েছে রাশিয়া।
রাশিয়ার কৃষিমন্ত্রী দিমিত্রি পাত্রুশেভ আজ শুক্রবার মস্কোয় রুশ শস্য সম্মেলনে বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘চলমান ২০২১–২২ মৌসুমে আমরা ইতিমধ্যে ২ কোটি ৮৫ লাখ টন গম রপ্তানি করেছি। আগামী ৩০ জুন মৌসুম শেষ হওয়ার আগে তা ৩ কোটি ৭০ লাখ টনে উন্নীত হবে। পরবর্তী মৌসুমে (১ জুলাই শুরু হতে যাওয়া) আমরা বিশ্ববাজারে ৫ কোটি টন শস্য রপ্তানি করতে চাই। এ জন্য উৎপাদন বাড়ানো হচ্ছে।’
বিশ্ববাজারে সরবরাহ করা গমের ৩০ শতাংশ জোগান দেয় ইউক্রেন ও রাশিয়া।
পশ্চিমা দেশগুলোর অভিযোগ, ইউক্রেন যুদ্ধে খাবার ও পণ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে মস্কো। এমনকি ইউক্রেনে উৎপাদিত গম চুরি করে রুশনিয়ন্ত্রিত এলাকায় সরিয়ে আনার অভিযোগ উঠেছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে।
তবে মস্কো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। রাশিয়া জানায়, বিশ্বজুড়ে খাবারের চলমান সংকট এড়াতে প্রয়োজনে ইউক্রেন থেকে শস্য রপ্তানির জন্য বিশেষ করিডর চালুর অনুমতি দেবে মস্কো। তবে শর্ত রয়েছে। তা হলো, মস্কোর বিরুদ্ধে আরোপ করা পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেই এই ব্যবস্থা চালু করা হবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার ফোনে কথা বলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এ সময় দুই নেতা ইউক্রেন পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে কথা বলেন। ফোনালাপে পুতিন ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, পশ্চিমারা যদি তাঁর দেশের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তাহলে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট এড়াতে মস্কো উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে প্রস্তুত।
পুতিন ও দ্রাঘির ফোনালাপের পর ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আজভ ও কৃষ্ণসাগরে জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আজভ ও কৃষ্ণসাগরে বেসামরিক পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের নিরাপত্তার নিশ্চিতে রাশিয়ার পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেখানে এসব জাহাজ চলাচলে নিয়মিত মানবিক করিডর চালু রাখার কথা উল্লেখ করেন পুতিন।
পুতিনের এমন মন্তব্যের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি শুক্রবার বলেন, ‘এখন তাঁরা (রাশিয়া) খাদ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়কে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা এটা সমর্থন করতে পারি না। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আমরা মিত্রদের সঙ্গে কথা বলব।’
এদিকে চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের কৃষকদের উৎপাদিত ২ কোটি টনের বেশি শস্য আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। দেশটিতে নতুন শস্য আহরণের মৌসুমও চলে এসেছে। এ অবস্থায় দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুবেলা বলেন, রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে দেশটি কৃষ্ণসাগরে ইউক্রেনের বন্দর নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে।
আল–জাজিরার খবরে বলা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরু পর থেকে ৪ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এসব তথ্য জানিয়ে বলে, প্রকৃত নিহতের সংখ্যা এর অনেক বেশি।