দুই বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে চলছে করোনার প্রকোপ। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে সারা বিশ্বে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৪ লাখ মানুষের মৃত্যুর হিসাব পাওয়া গেছে। তবে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে তথ্য দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। তাদের হিসাব বলছে, মহামারি শুরুর পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় ১ কোটি ৪৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া এই হিসাব গত দুই বছরে করোনায় যত মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছিল, তার চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। সংস্থাটির গবেষকদের বিশ্বাস, অনেক দেশই করোনায় মৃত্যুর হিসাব ঠিকঠাকভাবে রাখেনি। তাই উঠে আসেনি প্রকৃত চিত্র।
ডব্লিউএইচওর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যু ১ কোটি ৪৯ লাখ মানুষের মধ্যে ভারতেরই ৪৭ লাখ। দেশটির প্রকাশিত করোনায় মৃত্যুর হিসাবের চেয়ে এই সংখ্যা ১০ গুণ বেশি, আর বিশ্বে করোনায় মোট মৃত্যুর প্রায় এক–তৃতীয়াংশ।
ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে উঠে আসা করোনার মৃত্যুর হিসাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারত সরকার। বলেছে, প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে তাদের প্রশ্ন রয়েছে। তবে করোনায় প্রকৃত মৃত্যু নিয়ে করা অন্য গবেষণাগুলোতেও মোটামুটি একই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকার করোনায় মৃত্যুর যে হিসাব দিয়েছে, ডব্লিউএইচওর নতুন হিসাব তার চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। আর পাকিস্তানে মৃত্যুর হিসাবের তুলনায় ডব্লিউএইচওর হিসাব আট গুণ বেশি।
গবেষণায় বাড়তি ৯৫ লাখ মানুষের মৃত্যু নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য–উপাত্ত বিভাগের কর্মকর্তা সামিরা আসমা বলেন, ‘বিষয়টি মর্মান্তিক। সংখ্যাটি বিস্ময় জাগানোর মতো। করোনায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’
ডব্লিউএইচওর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমরা যদি মৃত্যুর হিসাব না রাখি, তাহলে আগামীতে এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত থাকার সুযোগ হারাব।’
ডব্লিউএইচওর গবেষণায় ব্যবহার করা পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘অতিরিক্ত মৃত্যু’ (এক্সেস ডেথ)। এই পদ্ধতিতে করোনা মহামারির আগে কোনো অঞ্চলের প্রত্যাশিত মৃত্যুর চেয়ে মহামারি শুরুর পর কী পরিমাণ বেশি মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ হিসাবে ভারতের পর যেসব দেশে অতিরিক্ত মৃত্যু বেশি হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, মেক্সিকো ও পেরু।