বৈশ্বিক করোনা মহামারি আরেকটি ভয়ংকর মাইলফলক ছুঁয়েছে গতকাল সোমবার। বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার দুই কোটি পার হয়ে গেছে। বিশ্বের প্রায় সব জায়গাতেই এ ভাইরাসের বিস্তার ঘটেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে জানানো হয়, তাদের সূত্র অনুযায়ী গতকাল বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণ দুই কোটি পার হয়ে যায়। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে মৃত্যুবরণ করেছেন ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৮৪২ জন।
গত বছর চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য খাতে যে সমস্যা তৈরি করেছে, এতে আর কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত মানুষের সংখ্যা সাড়ে সাত লাখ পার হয়ে যাবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাস্ক পরে চলাচল করার মতো বিষয়গুলো একসময় কল্পনাও করা যেত না। কিন্তু এখন তা কঠোর বাস্তব। সামাজিক দূরত্ব রাখার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার না ছাড়তে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘এই পরিসংখ্যানের পেছনে প্রচুর কষ্ট আর দুর্ভোগ লুকিয়ে রয়েছে। তবে আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, আশার সবুজ রেখাও আছে। এখনো মহামারিটি ঠেকিয়ে দেওয়ার সময় পার হয়ে যায়নি।’
তেদরোস বলেন, চোখের সামনেই রুয়ান্ডা ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশ সফলভাবে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করেছে।
তেদরোস আরও বলেন, ‘করোনার ফলে লকডাউন ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পাশাপাশি আমরা টিকা তৈরির প্রতিযোগিতাও দেখতে পাচ্ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বৈশ্বিক পর্যায়ে কাজ চলা ১৬৫টি টিকা পর্যালোচনা করছে। এখন পর্যন্ত ছয়টি টিকা মানবপরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের পরিচালক মাইকেল রায়ান সতর্ক করেছেন, টিকা কেবল সমস্যার একটি ভাগের সমাধান করবে। পুরোপুরি সমস্যা নির্মূল করতে পারবে না। তিনি এ ক্ষেত্রে পোলিও ও হামের কথা উল্লেখ করেন।
আজ মঙ্গলবার জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ২ কোটি ১৪ হাজার ৫৭৪ জনে পৌঁছেছে। এ সময় মারা গেছেন ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৫৫ জন। সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে সংক্রমণের সংখ্যা ৫০ লাখ ৮৯ হাজার ৪১৬ জন। মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৫ জন। এরপর রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭০ জন আর মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৭৫২ জন।
জনস হপকিনসের করোনা ট্র্যাকার অনুযায়ী, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণের সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন। মৃত্যু ৩ হাজার ৪৩৮ জন।
২৭ জুন করোনায় সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ গত ৪৪ দিনে আরও এক কোটির বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছে।
চীনের উহানে অজ্ঞাত কারণে মানুষের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গত ৩১ ডিসেম্বর শনাক্ত করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর কিছুদিন পরই চীনের বিজ্ঞানীরা জানান, নতুন এই ভাইরাস সার্স-করোনাভাইরাসের গোত্রের। দ্রুতই ভাইরাসটি বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। গত ৩০ জানুয়ারি করোনার সংক্রমণকে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এরপর সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসের সংক্রমণকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে। এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এই সংস্থা করোনার সংক্রমণে সৃষ্ট রোগকে ‘কোভিড-১৯ (করোনাভাইরাস ডিজিজ-২০১৯)’ নাম দেয়।
চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হন থাইল্যান্ডে, গত ১৩ জানুয়ারি। এরপর গত ৬ মার্চ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়ায়। অর্থাৎ রোগীর সংখ্যা ৬৭ দিনে এক লাখ হয়। তবে এরপর যেন লাগামছাড়া হয়ে যায় সংক্রমণ। গত ২ এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। মাত্র ২৭ দিনে রোগীর সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে যায়। এর ১৩ দিনের মাথায়, ১৫ এপ্রিল রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়ায়। রোগীর সংখ্যা ৩০ লাখ হয় ২৭ এপ্রিল। এর ১২ দিনের মাথায় রোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়ায়। রোগীর সংখ্যা ৫০ লাখ হয় ২০ মে। ২৯ মে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়ায়। এর ৯ দিনের মাথায়, ৭ জুন রোগীর সংখ্যা ৭০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৮০ লাখ ছাড়ায় ১৪ জুন। ২১ জুন রোগীর সংখ্যা ৯০ লাখ পার হয়।