বিশ্বকে নৌশক্তি দেখালেন পুতিন

রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবসের কুচকাওয়াজে যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার নৌবাহিনী দিবসের কুচকাওয়াজে যুদ্ধজাহাজ পরিদর্শন করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে পানিতে ৪০টি যুদ্ধজাহাজ চালিয়ে নৌশক্তির প্রদর্শন করল রাশিয়া। দেশটির বার্ষিক নৌবাহিনী দিবস উপলক্ষে রোববার নৌ-কুচকাওয়াজের এ আয়োজন করা হয়। যুদ্ধট্যাংক বহনে সক্ষম নতুন উভচর জাহাজ, ডুবোজাহাজ, দূরনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী জাহাজও প্রদর্শন করা হয়।

সিএনএন ও এএফপির খবরে বলা হয়, রাশিয়ার নৌবাহিনীর চার হাজারেরও বেশি সদস্য কুচকাওয়াজে অংশ নেন। ৪০টি যুদ্ধজাহাজের মধ্য প্রথমবারের মতো পানিতে ভাসে রণতরি অ্যাডমিরাল গরশকভ। যুদ্ধজাহাজের ২৬টি ছিল নতুন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এ বছরের মার্চে পুতিন ঘোষণা দিয়েছিলেন, তাঁর সামরিক বাহিনীতে নতুন এমন অস্ত্র যুক্ত হতে চলেছে, যা ন্যাটো জোটের প্রতিরক্ষাকে ‘অকার্যকর’ করে দিতে সক্ষম। তাঁর এ ঘোষণার কারণেই কুচকাওয়াজের দিকে মনোযোগ ছিল সবার। আর এ সুযোগে বিশ্বকে নিজের নৌশক্তি দেখিয়ে দিলেন পুতিন।

৪০টি যুদ্ধজাহাজ চালিয়ে বিশ্বকে নৌশক্তি দেখাল রাশিয়া। ছবি: তাস

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে রোববার প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে আসে রাশিয়ার নতুন রণতরি অ্যাডমিরাল গরশকভ। সাড়ে চার হাজার টনের এই রণতরি রাডার ফাঁকি দিয়ে দ্রুতগতিতে চলতে সক্ষম। ২০২৫ সালের মধ্যে এ ধরনের ছয়টি রণতরি রাশিয়ার নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে।

রাশিয়ার আরেক রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম স্পুটনিক জানায়, দেশটির নৌবাহিনীর বাল্টিক, উত্তর ও কৃষ্ণসাগর বহর এবং কাস্পিয়ান ফ্লটিলার চার হাজারের বেশি সদস্য কুচকাওয়াজে অংশ নেন। এ ছাড়া ৪০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ ও ছোট জাহাজের পাশাপাশি এই বাহিনীর এভিয়েশন বিভাগও অংশ নেয়।

কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘দেশ প্রতিরক্ষায় রুশ নৌবাহিনীর সদস্যরা নিজেদের সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে এবং কৌশলগত সমতা নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তাঁরা। ’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার এই নৌবাহিনী জাতীয় স্বার্থরক্ষায় সম্ভব সবকিছুই করবে। এসব যুদ্ধজাহাজ এবং সাবমেরিন সমুদ্রে প্রতিদিন রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে মন্তব্য করে পুতিন বলেন, ‘আমাদের নৌবাহিনীর যুদ্ধের প্রস্তুতির কৌশল, কৌশলগত ক্ষমতা, কর্মক্ষম দক্ষতা, শক্তির বিষয়ে আমরা গর্বিত। ’ এ বছর আরও আটটি জাহাজ বহরে যুক্ত হয়েছে বলেও জানান পুতিন।

সেন্ট পিটার্সবার্গের কাছে পানিতে নৌশক্তির কুজকাওয়াজ দেখেন অনেকেই। ছবি: তাস

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) বিশ্লেষক পল শুয়ার্টজের মতে, নতুন রণতরি অ্যাডমিরাল গরশকভ আকারে ছোট যুদ্ধজাহাজের মতো হলেও এটি অবিশ্বাস্যভাবে সশস্ত্র। এই রণতরি রুশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক কমান্ডের যৌথ গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক কার্ল শুস্টার বলেন, অ্যাডমিরাল গরশকভের সংযোজন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এটি জাহাজ থেকে জাহাজে আঘাত হানতে সক্ষম সুপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম। রাশিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যুক্তরাষ্ট্রের একই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর ও দ্রুতগতির।

আইভান গ্রেন, মার্শাল উস্তিনভ ও ওরিয়ল
রোববারের নৌশক্তি প্রদর্শনীতে আরও ছিল রাশিয়ার নতুন উভচর জাহাজ আইভান গ্রেন। এটি ১৩টি যুদ্ধট্যাংক বহনে সক্ষম। এ ছাড়া প্রদর্শনীতে ছিল যুদ্ধজাহাজ মার্শাল উস্তিনভ ও ডুবোজাহাজ ওরিয়ল। মার্শাল উস্তিনভ থেকে দূরনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা যায়।

বার্ষিক নৌবাহিনী দিবসে নৌ-কুচকাওয়াজে উভচর যুদ্ধজাহাজ, ডুবোজাহাজ, দূরনিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপকারী জাহাজ প্রদর্শন করা হয়। ছবি: তাস

তাস জানায়, এসব বিশেষায়িত জাহাজ ছাড়াও প্রদর্শনীতে ছিল আরও বেশ কয়েকটি জাহাজ। তবে কুচকাওয়াজে রাশিয়ার একমাত্র বিমানবাহী রণতরি কুজনেস্তভ ছিল না। ৫৮ হাজার টনের এই রণতরির মেরামত ও সংস্কারের কাজ চলছে। ২০২১ সালের আগে এটি বহরে ফিরবে না বলে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা তাস। সিরিয়ায় অভিযানের সময় জাহাজটি স্বল্পমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়।