পারমাণবিক সাবমেরিন বিক্রির চুক্তিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার ওপর চটেছে ফ্রান্স। দেশ তিনটির সঙ্গে ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে ফ্রান্সের সম্পর্ক। এমন পরিস্থিতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তাঁর ভাষ্য, ফ্রান্সের প্রতি যুক্তরাজ্যের ভালোবাসা দৃঢ়। খবর এএফপির।
স্থানীয় সময় গতকাল রোববার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনার সময় সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যর মধ্যে ‘খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক’ রয়েছে। এই সম্পর্ক ‘অনেক গুরুত্ব’ বহন করে বলে মনে করেন তিনি।
সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। এইউকেইউএস নামের এই চুক্তির অধীনে অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রযুক্তি সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য।
ত্রিদেশীয় এই নিরাপত্তা চুক্তির আগে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের সাবমেরিন-সংশ্লিষ্ট একটি চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তিটি অস্ট্রেলিয়া বাতিলের কারণে শত কোটি ইউরো অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ফ্রান্স। এ কারণে ত্রিদেশীয় নিরাপত্তাচুক্তি নিয়ে ফ্রান্স ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছে। প্যারিস বলেছে, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যেভাবে না জানিয়ে চুক্তিটি করেছে, তাতে ফ্রান্স অত্যন্ত অসন্তুষ্ট।
তবে এইউকেইউএস নিয়ে ফ্রান্সের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে উল্লেখ করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই চুক্তি নিয়ে কারও চিন্তা করার কিছু নেই। বিশেষ করে আমাদের ফরাসি বন্ধুদের।’
চুক্তিটিকে কেন্দ্র করে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্রান্সের অভূতপূর্ব কূটনৈতিক লড়াই শুরু হয়েছে। ফরাসি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করে দেশ দুটির বিরুদ্ধে ‘দ্বৈততা, ঘৃণা ও মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ এনেছে।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত নিজ দেশের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায় ফ্রান্স। বর্তমান পরিস্থিতি পুনরায় মূল্যায়ন করতে রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে ফ্রান্স উল্লেখ করেছে।
সবশেষ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে মন্ত্রীপর্যায়ের একটি বৈঠক বাতিল করেছে ফ্রান্স। চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের মধ্যে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কূটনৈতিক পদক্ষেপের বাইরে আক্রমণাত্মক নানা মন্তব্যও করছেন ফ্রান্সের কর্মকর্তারা। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভেস লে ড্রিয়ান ফ্রান্সকে পাশ কাটিয়ে করা ত্রিদেশীয় চুক্তিটিকে ‘পেছন থেকে ছুরি মারার মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর ভাষ্য, মিত্রদের মধ্যে এমন ব্যবহার একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। নতুন নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে ফ্রান্সের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বিশ্বাসভঙ্গ ও অপমানজনক আচরণ করেছে বলেও গত শনিবার মন্তব্য করেছেন তিনি।