যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেল ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। গতকাল বুধবার স্পেনের মাদ্রিদে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত হয়। ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত পার্লামেন্টে এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন পেলেই নরডিক অঞ্চলের দেশ দুটির সদস্যপদ চূড়ান্ত হবে। এর আগে দেশ দুটিকে জোটে নেওয়ার বিরোধিতা থেকে সরে আসে তুরস্ক। এতে ন্যাটোতে যোগদানের পথ পরিষ্কার হলো সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের। খবর রয়টার্স ও আল-জাজিরার
ন্যাটো সম্মেলনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জোটে যোগদানের জন্য ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে আমন্ত্রণ জানানোর ৩০ সদস্যরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়াকে আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্রদের নিরাপত্তার প্রতি ‘সবচেয়ে মারাত্মক ও সরাসরি হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়ে সদস্যদেশগুলো একমত হয়েছে। ন্যাটো নেতাদের ঘোষণায় বলা হয়, ‘ন্যাটোর সদস্য হতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে আজ আমরা আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এর আগে দেশ দুটির এই জোটে যোগদানের ওপর থেকে ভেটো প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক।
দেশ দুটিকে যুক্ত করার বিষয়টি ন্যাটো জোটের পার্লামেন্টে অনুমোদন পেতে হবে। এটা করতে বছরখানেক লেগে যেতে পারে। অনুমোদন পেয়ে গেলে ন্যাটোর ৫ অনুচ্ছেদের সামষ্টিক প্রতিরক্ষা ধারার অধীনে চলে আসবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বিত পারমাণবিক সুরক্ষার আওতায় চলে আসবে নরডিক দেশ দুটি। ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলেনবার্গ বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি যে ফিনল্যান্ড, সুইডেনসহ সব মিত্রকে রক্ষার সামর্থ্য আমাদের আছে।’
নরডিক অঞ্চলের দেশ দুটি এত দিন জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করে আসছিল। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করলে নড়চড়ে বসে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সরকার। ন্যাটো জোটে যোগ দিতে তোড়জোড় শুরু করে হেলসিঙ্কি ও স্টকহোম। তবে এতে বাদ সাধে ন্যাটো সদস্য তুরস্ক। দেশ দুটির সদস্যপদ আটকাতে মে মাসে ভেটো প্রয়োগ করে আঙ্কারা।
ন্যাটো জোটে সদস্য অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত আবশ্যক। তুরস্কের বিরোধিতার কারণে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে। ভেটো তুলে নিতে কুর্দি বিদ্রোহীদের সংগঠন পিকেকের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্ত দেয় আঙ্কারা। এ নিয়ে ন্যাটো মহাসচিবের মধ্যস্থতায় তিন দেশের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়।
গত মঙ্গলবার মাদ্রিদে চার ঘণ্টা আলোচনার পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রেসিডেন্টদের সঙ্গে তাঁদের সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে একমত হন। এ নিয়ে ত্রিপক্ষীয় যৌথ স্মারক সই হয়। তুরস্কের নিরাপত্তার বিষয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর ভেটো তুলে নেয় আঙ্কারা।
তুরস্কের যোগাযোগ অধিদপ্তরের ভাষ্য অনুযায়ী, দুই নরডিক দেশ পলাতক ব্যক্তিদের প্রত্যর্পণের বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাসী প্রোপাগান্ডা’ ঠেকানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ ছাড়া তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা এবং সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে হেলসিঙ্কি ও স্টকহোম একমত হয়েছে।
ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য করার এই পদক্ষেপ ইউরোপের নিরাপত্তার ক্ষেত্র কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম বড় পরিবর্তন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এদিকে নরডিক অঞ্চলে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে মিত্রদেশগুলো। দেশ দুটিকে আশ্বস্ত করতে সামরিক মহড়ার আয়োজন করা হবে। পাশাপাশি বাল্টিক সাগরে নৌ টহল দেওয়া হবে।
নরডিক এই দেশ দুটিকে ন্যাটোর সদস্য করার বিষয়ে সদস্যদেশগুলোর ঐক্যের প্রশংসা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনে আগ্রাসন চালানোর কৌশল হিতে বিপরীত হয়েছে। বাইডেন বলেন, এটা ঠিক সেই পদক্ষেপ, যা পুতিন চাননি। কিন্তু ইউরোপের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য এই পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় সম্পূর্ণ বদলে যাওয়া এক পরিস্থিতিতে এবার ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তিন দিনের এ সম্মেলন মঙ্গলবার স্পেনের মাদ্রিদে শুরু হয়। এতে ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি সদস্যদেশগুলোর সামরিক ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঠেকাতে ১৯৪৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন সদস্য হলে এই জোটে দেশের সংখ্যা হবে ৩২।