রাশিয়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন আক্রমণ করে। এরপর দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় এবং পণ্য আমদানি বন্ধ করে দেয় অনেক দেশ। তবে এসব সত্ত্বেও আক্রমণের পরবর্তী ১০০ দিনে ৯ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রি করেছে রাশিয়া। দেশটি প্রতিদিন গড়ে ৯৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের জ্বালানি বিক্রি করেছে।
ইউক্রেন আক্রমণের কিছু আগে থেকে সারা বিশ্বে তেলের চাহিদা বাড়ছিল। রাশিয়া বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ এবং তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক। ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানিগুলোর মধ্যে রাশিয়া তেল থেকেই সবচেয়ে বেশি আয় করেছে। এ খাত থেকে দেশটি আয় করেছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। সব জ্বালানির মধ্যে এটি অর্ধেক।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া থেকেই ৪১ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি হয়। কিছু দেশ ব্যাপকভাবে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভর করে। রাশিয়া এ সময় যে ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের পাইপলাইন গ্যাস রপ্তানি করেছে, তার মধ্যে ৮৫ শতাংশই গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে।
ইউক্রেন আক্রমণের পরের ১০০ দিনে রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানি বিক্রির ৬১ শতাংশই হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। এদের মধ্যে জার্মানি, ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো শীর্ষ আমদানিকারক। তবে সবাইকে টেক্কা দিয়েছে চীন। তারপরই আছে জার্মানি। চীন মে মাসে প্রতিদিন গড়ে ২০ লাখ ব্যারেল করে তেল আমদানি করেছে। আগের বছরের তুলনায় এটি ৫৫ শতাংশ বেশি।
তবে আমদানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ১০০ দিনে রাশিয়ার মোট তেল রপ্তানির ১৮ শতাংশই গেছে ভারতে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর কিছু দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানিসহ নানা ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এসব দেশ। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেন তেল আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। মে মাসে তাদের প্রতি মাসের আমদানির পরিমাণ ১০০ থেকে ৯৯ শতাংশ কমে গেছে।
বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির পরিমাণ এ মাসে ১৫ শতাংশ কমেছে। রাশিয়াকে নিয়ে একটি নেতিবাচক রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি হচ্ছে, আমদানি কমে যাওয়া সেই ইঙ্গিত বহন করে।
রাশিয়া থেকে আমদানি কমানোর ধারা অব্যাহত আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা রাশিয়া থেকে আনা ৯০ শতাংশ তেলের ওপর বলবৎ হবে।
এর প্রভাব বোঝা যাবে ছয় থেকে আট মাস পর। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমানোর চিন্তা থাকলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। তাই ইউরোপের অর্থনীতির ওপর এর একটা প্রভাব পড়বে।