করোনা সংক্রমণের একেবারে শুরুতেই ত্বরিত ব্যবস্থা নিয়েছিল তাইওয়ান। এর ফলে চীনের পাশের দেশটিতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ তেমন ঘটেনি। এখন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ মাস্ক রপ্তানি করছে তাইওয়ান।
ইউরোপের যে দেশটিতে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষের করোনাভাইরাসের টেস্ট করা হয়েছে, তার নাম জার্মানি। প্রতি সপ্তাহে দেশটিতে সাড়ে তিন লাখ টেস্ট হয়েছে। খুব কার্যকরভাবে আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে দেশটিতে। চিকিৎসাও চলছে ভালোভাবে।
নিউজিল্যান্ড করোনাভাইরাসের বিস্তার শুরুর একেবারে শুরুতে পর্যটন বন্ধ করে দেয়। মাসব্যাপী পুরো দেশ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা নয়।
তিনটি দেশ বিশ্বের তিন ভিন্ন প্রান্তের। একটি ইউরোপের, একটি দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয়, আরেকটি এশিয়ার। এই ভিন্নতা থাকলেও তিন দেশের মধ্যে একটা বিষয়ে মিল আছে। আর তা হলো, তিনটি দেশেই সরকারপ্রধান একজন করে নারী। সারা বিশ্বের সরকারপ্রধানদের ৭ শতাংশের কম নারী শাসকেরা।
যে দেশগুলোর কথা বলা হলো, সেগুলো বহুদলীয় গণতান্ত্রিক দেশ। সরকারের প্রতি এসব দেশের জনগণের আস্থার পরিমাণও যথেষ্ট। দ্রুত ও বিজ্ঞানভিত্তিক তৎপরতার ফলে এসব দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অপেক্ষাকৃত কম। এসব দেশের টেস্টের পরিমাণ অনেক বেশি, মানুষের মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবার সুযোগ আছে, আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্তও হয়েছে ব্যাপকভাবে। আবার এ দেশগুলোয় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কঠোর ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।
এই দেশগুলোর মতো আরেক গণতান্ত্রিক দেশ তাইওয়ান। দেশটির নারী প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েন যখন শুনলেন চীনে এক রহস্যজনক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হয়েছে তখনই উহান থেকে আসা সব উড়োজাহাজের যাত্রীর কঠোর স্ক্রিনিং হলো। দ্রুতই এ দেশে মহামারি সেন্টার স্থাপিত হলো, উৎপাদন হতে শুরু হলো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম। চীন, ম্যাকাও ও হংকং থেকে বিমান পরিবহনে বিধিনিষেধ জারি হলো। করোনাভাইরাসে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের দেশ তাইওয়ানে এযাবৎ আক্রান্তের সংখ্যা মাত্র ৩৯৩। মৃতের সংখ্যা ৬।
চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জার্মানির সাফল্যের কারণ কী? হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান হ্যানস গিওর্গ উসিলেস নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতাই জার্মানির বড় শক্তি।’
পর্যটনের ওপর অর্থনীতির অনেকটা নির্ভর থাকলেও একে বন্ধ করে দিতে কসুর করেননি দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা অ্যারডার্ন। আর এর ফলও পেয়েছেন।
নরডিক পাঁচ দেশের মধ্যে চারটিই নারীশাসিত। ইউরোপের অন্য দেশগুলোর চেয়ে এসব দেশে মৃত্যুহার অনেক কম। ৫৫ লাখ মানুষের দেশ ফিনল্যান্ডের ৩৪ বছর বয়সী নারী প্রধানমন্ত্রী সান্না মেরিন বিশ্বনেতাদের মধ্যে কনিষ্ঠতম। করোনা প্রতিরোধে তাঁর নেওয়া ব্যবস্থায় খুশি দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ। দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৫৯।
আইসল্যান্ডের নারী প্রধানমন্ত্রী ক্যাটরিন জ্যাকবসডোটির। দ্বীপরাষ্ট্রটির বাসিন্দা মাত্র ৩ লাখ ৬০ হাজার। কিন্তু ব্যাপক হারে এ দেশটি করোনার টেস্ট করিয়েছে। এই নরডিক দেশগুলোর মাত্র একটি সুইডেনের পুরুষ প্রধানমন্ত্রী স্টেফান লে ফেন। তিনি প্রথমে লকডাউন দিতে রাজি হননি। শুরুতে দেশটির মৃত্যুহার ব্যাপক হয়েছিল।
এখনই বলা সম্ভব নয়, বলা উচিতও না যে কোন দেশ করোনার লড়াইয়ে জিতল, কে হারল। কিন্তু এতক্ষণ যে উদাহরণগুলো দেওয়া হলো, তাতে একটি বিষয় নিশ্চিত, করোনার বিরুদ্ধে লড়তে দ্রুত এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে নারী সরকারপ্রধানেরা অনেক বেশি দক্ষতা দেখিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ব এখনো পুরুষশাসিত।
ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের হিসাব, বিশ্বের ১৫২টি রাষ্ট্রের মধ্যে মাত্র ১০ দেশের সরকারপ্রধান নারী। বিশ্বের ৭৫ শতাংশ সাংসদ পুরুষ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মতো ব্যবস্থাপক পর্যায়ে পুরুষের সংখ্যা ৭৩ শতাংশ, মূলধারার গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ৭৬ শতাংশই পুরুষ।
সূত্র: সিএনএন