ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগমুহূর্তে দেশটির দনবাস অঞ্চলের স্বঘোষিত দুই প্রজাতন্ত্র লুহানস্ক ও দোনেৎস্ককে ‘স্বাধীন’ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয় রাশিয়া। রাশিয়া এখন বলছে, দনবাসের ‘স্বাধীনতাই’ এখন তাদের ‘শর্তহীন অগ্রাধিকার’। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন। খবর বিবিসির।
তিন মাসের বেশি সময় আগে শুরু হওয়া এ যুদ্ধের পক্ষে আবারও নিজের অবস্থান তুলে ধরে লাভরভ বলেন, রাশিয়া তাদের প্রতিবেশী ইউক্রেনকে নিরস্ত্র করার লক্ষ্য নিয়েই এ অভিযান শুরু করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মতোই তিনিও আবার বলেন, ‘নব্য নাৎসি একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এ লড়াই করছে তারা।’
বিবিসি বলছে, দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাশিয়া শাসন করছেন ভ্লাদিমির পুতিন। আসছে অক্টোবরে ৭০ বছর বয়সে পা দেবেন তিনি। ইউক্রেনে যুদ্ধের মধ্যে সম্প্রতি এমন গুঞ্জন উঠেছিল যে পুতিন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সাক্ষাৎকারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তবে তিনি এ গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন প্রতিনিয়ত জনসমক্ষে আসছেন জানিয়ে সের্গেই লাভরভ বলেন, ‘আমি মনে করি না যে বিবেকবান মানুষজন এই ব্যক্তির (পুতিন) মধ্যে কোনো ধরনের অসুস্থতা বা অসুস্থতার লক্ষণ দেখতে পাবেন।’
রাশিয়া ইউক্রেনের কিছু শহরাঞ্চলে কামান ও রকেট হামলা করেছে। এতে সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছেন। এ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বেসামরিক অবকাঠামোতে সব ধরনের হামলা এড়াতে রাশিয়ার সেনাদের কঠোর আদেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের হিসাবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার হামলা শুরুর পর ইউক্রেনের অন্তত ৪ হাজার ৩১ বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪ হাজার ৭৩৫ জন। এ ছাড়া অসংখ্য সেনা হতাহত হয়েছেন। ইউক্রেনের ১ কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ বাড়িঘর ছেড়েছেন। শহর ও নগরগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ইউক্রেনের শিল্পাঞ্চল ও খনিজ সম্পদের উৎস হিসেবে পরিচিত দনবাস অঞ্চল দখলের লক্ষ্য নিয়ে এখন লড়াই করছে রুশ বাহিনী। দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাসের বেশির ভাগ মানুষ বিচ্ছিন্নতাবাদী। ঐতিহাসিকভাবে এই দুই অঞ্চলের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। অঞ্চল দুটি ২০১৪ সাল থেকে বিচ্ছিন্ন। তবে অঞ্চল দুটিতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই। এখন পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে রুশ সেনাদের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই ইউক্রেনের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
লাভরভ বলেন, ‘লুহানস্ক ও দোনেৎস্ক অঞ্চল দুটিকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। এখন অঞ্চল দুটিতে জয় রাশিয়ার শর্তহীন অগ্রাধিকার।’ বিবিসি বলছে, ইউক্রেনে হামলা শুরুর পরই রাশিয়া কিয়েভ দখলের চেষ্টা করেছিল।
কিন্তু ইউক্রেনের সেনাদের প্রতিরোধের মুখে রুশ বাহিনী পিছু হটে। এরপর এপ্রিলের শেষদিকে এসে রাশিয়া ঘোষণা দেয় দনবাসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়াই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। এর পর থেকে দনবাসের শহর ও নগরে হামলা জোরদার করেছে রুশ বাহিনী।