ব্রিটিশ রাজপরিবারের দায়িত্ব থেকে স্থায়ীভাবে সরে যাওয়া প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, রাজপরিবারের জৌলুশপূর্ণ জীবন ছেড়ে আসার আগে নিজের মধ্যে তিনি মা ডায়ানার জীবনের করুণ ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছিলেন। এ নিয়ে উদ্বিগ্নও ছিলেন তিনি। আজ সোমবার বিবিসির এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়।
মার্কিন উপস্থাপক অপরাহ্ উইনফ্রেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিউক অব সাসেক্স হ্যারি তাঁর এ উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেন। সাক্ষাৎকারটি ৭ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রে সম্প্রচারিত হওয়ার কথা রয়েছে। সাক্ষাৎকারের কিছু চৌম্বক অংশ নিয়ে ৩০ সেকেন্ডের দুটি ভিডিও ক্লিপ গতকাল রোববার রাতে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রচারমাধ্যম সিবিএস।
সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি বলেছেন, রাজপরিবারে থাকার সময় নানা উদ্বেগের মধ্যেও স্ত্রী মেগান মের্কেলকে পাশে পেয়ে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তিনি। তিন দশক আগে তাঁর মা প্রিন্সেস ডায়ানার এ রাজপ্রাসাদ ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করে হ্যারি বলেন, কী ভীষণ রকম নিঃসঙ্গতার মধ্য দিয়ে তাঁর মাকে যেতে হয়েছে, সেই কথা কল্পনাও করতে পারেন না তিনি।
অপরাহ্ উইথ মেগান অ্যান্ড হ্যারি: আ সিবিএস প্রাইমটাইম স্পেশাল’ শিরোনামের বিশেষ ওই টিভি শো যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও প্রচার করা হবে। তবে যুক্তরাজ্যে কখন প্রচারিত হবে, তা স্পষ্ট নয়। সাক্ষাৎকারটির ওপর প্রকাশিত দুই ক্লিপে মেগানকে কিছু বলতে দেখা যায়নি।
এক বছর আগে হ্যারি ও তাঁর মার্কিন স্ত্রী মেগান রাজকাজ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজপরিবারের কারও সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে তাঁদের নেওয়া এ সিদ্ধান্তে তোলপাড় সৃষ্টি হয় রাজপরিবারে। ওই সিদ্ধান্তে বিস্মিত হয়েছিলেন বিশ্ববাসী। এই দম্পতি জানিয়েছিলেন, তাঁরা স্বাবলম্বী হয়ে বাঁচতে চান।
সম্প্রতি হ্যারি ও মেগান জানিয়ে দেন, তাঁরা আর কখনো রাজদায়িত্বে ফিরছেন না। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও ডিউক অব সাসেক্স ও ডাচেস অব সাসেক্সকে তাঁদের রাজকীয় উপাধি এবং রাজপরিবার থেকে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজকীয় দায়িত্ব ছাড়ার পর গত বছর হ্যারি ও মেগান যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। এরপর থেকে এক নতুন জীবন শুরু করেছেন এ দম্পতি।
অপরাহ্ উইনফ্রেকে প্রিন্স হ্যারি বলেন, ‘(মায়ের) ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আমার মধ্যে ঘটতে চলেছে, এটিই আমাকে সবচেয়ে বেশি চিন্তিত করে তুলেছিল।’ তিনি বলেন, ‘(তবে আজ) এখানে আসতে পেরে, আমার স্ত্রীকে পাশে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমি সত্যি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছি।’
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছেলে প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লসের সঙ্গে ১৯৯৬ সালের আগস্ট মাসে বৈবাহিক সম্পর্কে ইতি টানার সময় প্রিন্সেস অব ওয়েলস ডায়ানা তাঁর ‘রয়্যাল হাইনেস’ সম্মানসূচক উপাধি ত্যাগ করেন। পরের বছর ফ্রান্সের প্যারিসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত হন তিনি।
সিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, সাক্ষাৎকারে হ্যারি রাজপ্রাসাদ ছাড়ার পর যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো ও তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে কথা বলেন।
মেগান কথা বলেন মার্কিন অভিনেত্রী থেকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্য হয়ে ওঠা, রাজপুত্র হ্যারিকে বিয়ে, মা হওয়া, চাপের সঙ্গে জীবনকে মানিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে।
এর আগে মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রিন্স হ্যারি রাজকীয় জীবনে তাঁর ওপর নানা চাপ ও লন্ডন থেকে বিদেশে পাড়ি জমানো নিয়ে কথা বলেন। এ সাক্ষাৎকারেই ব্রিটিশ গণমাধ্যমের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেন তিনি।
‘দ্য লেট লেট শো’ নামের ওই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে হ্যারি বলেছিলেন, ‘ব্রিটিশ গণমাধ্যম কেমন হতে পারে, আমরা সবাই জানি। এই গণমাধ্যম আমাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছিল। আমার কাছে এটিকে বিষের মতো মনে হচ্ছিল। তাই কোনো স্বামী ও কোনো বাবা যা করতেন, আমিও তা–ই করেছি।’