করোনার টিকা নিয়ে কৌশলগত ভ্রান্তির কথা স্বীকার করেছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়ন।
ইউরোপের দেশগুলোয় মন্থরগতিতে টিকাদানের সমালোচনার মুখে উরসুলা এই ভ্রান্তির কথা স্বীকার করলেন।
টিকাদানের অতি মন্থরগতি নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ইইউভুক্ত বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমগুলোয় তীব্র সমালোচনা চলছে।
টিকাদানে বিলম্বের কারণ খুঁজতে বুধবার ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা ব্রাসেলসে উরসুলাকে আমন্ত্রণ জানান।
পার্লামেন্ট সদস্যদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট টিকানীতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি জানান, ইইউর ২৭ সদস্যের জন্য ইতিমধ্যে ২ কোটি ৬০ লাখ টিকা সরবরাহ করেছে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
উরসুলা জানান, এখন পর্যন্ত ইইউভুক্ত দেশগুলোর মাত্র ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এখন লক্ষ্য আগামী গ্রীষ্ম নাগাদ ৭ কোটি মানুষকে টিকাদান।
ইইউভুক্ত দেশগুলোয় প্রায় ৪৪ কোটি ৬০ লাখ লোক বসবাস করে। উরসুলা বলেন, ‘এককভাবে চিন্তা না করে আমরা সমবেতভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ ও টিকাদানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা টিকা অনুমোদনে দেরি করেছি। টিকার উৎপাদন নিয়ে আমরা যতটা আশাবাদী ছিলাম, বাস্তবে তা হয়নি। এ কারণেই বিলম্বের ঘটনা ঘটছে। প্রতিশ্রুতির চেয়ে কম ডোজ সরবরাহ করায় সদস্য রাষ্ট্রগুলোয় টিকাদানের ক্ষেত্রে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে।’
জার্মানির সুদ ডয়চে যাইটুং পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারেও উরসুলা টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে জার্মানির ডের স্পিগেল পত্রিকা ইউরোপীয় জনগণের মতামত নিয়ে একটি জরিপ প্রকাশ করেছে। জরিপটি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ টিকাদানে দীর্ঘসূত্রতা ও মন্থরগতির সমালোচনা করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপের জনবহুল দেশ জার্মানিতে মাত্র ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ।
ইইউভুক্ত দেশগুলোয় এখন ৮০ বা তার চেয়ে বেশি বছর বয়সী ব্যক্তিদের টিকা দেওয়া হচ্ছে।
পুরো ইউরোপে লকডাউন করার পরও অঞ্চলটিতে সাত লাখের বেশি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা গেছে। করোনার বিস্তার ঠেকাতে জার্মান সরকার নতুন করে আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন জারি করেছে।
জার্মানির রোগ বিষয়ের গবেষণা কেন্দ্র রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ৫৫৬ জন।