জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল গত শুক্রবার গিয়েছিলেন তাঁর নিজ চিকিৎসকের কাছে। তিনি সেখানে যান মূলত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও একটি প্রতিষেধক টিকা নিতে। এখন সেই চিকিৎসকই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত।
গতকাল রোববার সন্ধ্যায় এ ব্যাপারে জার্মানির সরকারি মুখপাত্র স্টিফেন সিবার্ট জানান, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল শুক্রবার নিজের চিকিৎসকের কাছে তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য গিয়েছিলেন। ওই চিকিৎসকের কাছে তিনি নিউমোকোকাল টিকা নেন।
পরে ওই চিকিৎসকের করোনাভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ এসেছে। এতে ম্যার্কেলও পড়ে গেছেন শঙ্কায়। আগামী দুই সপ্তাহের জন্য স্বেচ্ছা–কোয়ারান্টিনে অবস্হান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। করানাভাইরাসে শরীরে ঢুকেছে কি না, তা এখন তাঁকে নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
সরকারি মুখপাত্র জানান, ম্যার্কেল শুক্রবার মধ্য বার্লিনে, মোরেন স্ট্রারাসেতে একটি সুপার মার্কেটে বাজার করার সময় নিজ হাতে ট্রলি ঠেলে নিয়ে যান। কাজেই তাঁর ঝুঁকি রয়েছে।
ম্যার্কেল স্বেচ্ছা–কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর আগে জার্মানির ১৬ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করেন। করোনাভাইারাসের প্রাদুর্ভাব বিস্তৃত হওয়ায় সারা দেশ লকডাউন করার বিষয়টি উঠলেও বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় এনে দেশে নয়টি নতুন বিধি জারি করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:
১. সব নাগরিককে অনুরোধ করা হয়েছে নিজ নিজ পরিবারের বাইরে খুব প্রয়োজন না হলে অন্য নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ বা যথাসম্ভব কমাতে।
২. বাইরে সবার চলাফেরার ক্ষেত্রে ন্যূনতম দেড় মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
৩. দুজনের বেশি মানুষ একসঙ্গে চলাফেরা করতে পারবে না। তবে একই পরিবার বা একই ঘরের বাসিন্দাদের বেলায় তা প্রযোজ্য হবে না।
৪. কাজের জন্য বা জরুরি কাজ বা বাজারে, চিকিৎসকের কাছে পরীক্ষায়, শরীরচর্চা, জগিং, খোলা হাওয়ায় হাঁটতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা বা নিষেধ নেই।
৫. জার্মানির গুরুতর পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে জনস্বার্থে প্রকাশ্যে বা বাড়িতে বা অন্য কোনো স্থানে একসঙ্গে জমায়েত শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
৬. রেস্তোরাঁ ও যেকোনো খাবারের দোকান বন্ধ থাকবে। তবে বাড়িতে খাবার সরবরাহ করার বেলায় তা প্রজোয্য নয়।
৭. চুল কাটার সেলুন, প্রসাধন স্টুডিও, ম্যাসেজ সেলুন ও ট্যাটু স্টুডিওগুলো বন্ধ থাকবে। এসব স্থানে মানুষ পরস্পরের সংস্পর্সে আসার সুযোগ রয়েছে।
৮. গণপরিবহনের বেলায় প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
৯. জারি করা এই বিধি আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বলবৎ থাকবে।
১৬ রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার এসব বিধি সবাইকে মেনে চলার বিষয়ে সজাগ করবে। জার্মানিতে বাড়তে থাকা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতেই এসব নতুন বিধি জারি করা হয়েছে। ২২ মার্চ পর্যন্ত জার্মানিজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৪ হাজার ৮৭৩। ভাইরাসের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে রোগে ভুগে মারা গেছেন ৯৪ জন।