জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এসপিডি) নেতা ওলাফ শলৎস বলেছেন, তিনি দেশটির ফ্রি ডেমোক্রেটিক ও গ্রিনস দলের সঙ্গে জোট গড়ার জন্য চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আজ বুধবার ওলাফ শলৎস এ মন্তব্য করেন। এর মধ্য দিয়ে জার্মানিতে আঙ্গেলা ম্যার্কেল যুগ শেষ হয়ে গেল।
প্রায় দুই মাস ধরে আলোচনার পর ওলাফ শলৎসের দল অন্য দুই দলের সঙ্গে ১৭৭ পাতার চুক্তি করেছে। চুক্তিতে তিন দল সবুজ প্রযুক্তি এবং ডিজিটালাইজেশনে বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করার কথা বলেছে।
এই চুক্তির মধ্য দিয়ে জার্মানিতে প্রথমবারের মতো এসপিডি, এফডিপি ও গ্রিনসের মধ্যে জোট হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া ১৬ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ম্যার্কেলের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল দল ক্ষমতার বাইরে চলে গেল।
বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে শলৎস বলেছেন, ‘আমরা আরও অগ্রগতির সাহস করতে চাই। জার্মানিকে এগিয়ে রাখতে আমরা ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করব।’
অবশ্য ম্যার্কেল যে কাজ করে গেছেন, তা পূরণ করতে অনেক কিছু করতে হবে শলৎসের সরকারকে। জার্মানি ও ইউরোপের অনেক বড় সমস্যার সময় হাল ধরেছেন ম্যার্কেল। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে কর্তৃত্ববাদ বেড়ে যাওয়ার মুখে উদার গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি।
তবে ম্যার্কেলের সমালোচকেরা বলে থাকেন, তিনি সমস্যার সমাধান করার পরিবর্তে তা কোনোরকম অন্য ব্যবস্থা করতেন। তাঁর উত্তরাধিকারীকে অনেক দিক থেকে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, আগামী মাসে এই জোট সবকিছু ঠিকঠাক করে সরকার গঠন ও শপথ নেবে।
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের হাত ধরে জার্মানিতে আধিপত্য গড়ে তুলেছিল মধ্য ডানপন্থী দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (এসডিইউ)। দেড় যুগের সেই আধিপত্যের অবসান ঘটিয়ে গত সেপ্টেম্বরের নির্বাচনের পর দেশটির সবচেয়ে পুরোনো দল সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এসপিডি) সামনে নিয়ে আসেন ওলাফ শলৎস। জার্মানির চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের অনেক বছরের জোটসঙ্গী ছিল শলৎসের দল।
জার্মানিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এই সরকারকে দ্রুত কঠোর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।
মহামারির সময় ম্যার্কেলের মন্ত্রিসভায় অর্থমন্ত্রী ও ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন ওলাফ শলৎস। সংকটের সময় নিজেকে অবিচলিত রাখার জন্য জার্মানিতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। জার্মানির পূর্বাঞ্চলে কিছুদিন আগেই ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। বন্যায় দুর্গতদের ত্রাণ ও জরুরি সাহায্যে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো বিতরণ হয়েছিল শলৎসের হাত দিয়েই। করোনার সময়ও একই কাজ করে গেছেন তিনি।
৬৩ বছর বয়সী শলৎস রাজনীতিক হিসেবে মৃদুভাষী। আবেগঘন বক্তব্য দিতে দেখা যায় না তাঁকে। এ কারণে জার্মানিতে অনেকেই তাঁকে ‘শলৎসমাত’ বলেন। বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন, শলৎসের এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই হয়তো ভোটাররা তাঁকে ভোট দিতে উৎসাহী হয়েছেন। শলৎস ভিন্ন দলের নেতা হয়েও এসডিইউ নেতৃত্বাধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সরকারপ্রধান হিসেবে ম্যার্কেলের যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।
শলৎসের জন্ম জার্মানির উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য লোয়ার স্যাক্সোনিতে। তাঁর বেড়ে ওঠা জার্মানির অন্যতম ধনী শহর হামবুর্গে। পরবর্তী সময়ে হামবুর্গের মেয়রও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। রাজ্যের রাজনীতি থেকেই তিনি জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন। শলৎস পরবর্তী সময়ে ম্যার্কেলের প্রথম মন্ত্রিসভায় শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।