জলবায়ু সম্মেলন স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে গতকাল রোববার শুরু হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা যোগ দিয়েছেন এ সম্মেলনে। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। কেউ মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আসলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কেউ মনে করেন স্বাভাবিক নিয়মেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ে। কেউ আবার ভাবেন জনগণ ও বিভিন্ন দেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি ক্ষমতাধরদের এক ধরনের চাল। এসব জনশ্রুতি ও প্রচলিত ধারণার কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তার বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে এএফপিতে।
অনেকে মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে সংকট, তা আসলে বিজ্ঞানীদের ধোঁকাবাজি। আবার অনেকের ধারণা, সরকার জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতেই জলবায়ু পরিবর্তনের নামে ষড়যন্ত্র করছে। এ ধরনের ধারণা যে একেবারেই ভ্রান্ত, তার প্রমাণ হিসেবে এএফপি হাজার হাজার গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক জরিপের কথা বলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তসরকার প্যানেলে (আইপিসিসি) এ ধরনের গবেষণা ও জরিপবিষয়ক তথ্য জানা যায়। এসব গবেষণা, জরিপ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে এএফপি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষ দায়ী, এটি পুরোপুরি সত্য। এ বছর আইপিসিসির ৩ হাজার ৫০০ পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
১৯৫টি দেশের প্রতিনিধিরা এর অনুমোদন দিয়েছেন। ৬৬ দেশের ২৩৪ লেখক সংযুক্ত রয়েছেন এ গবেষণা প্রতিবেদনের সঙ্গে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে এই প্যানেল প্রতিষ্ঠিত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাঁদের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, এ প্যানেলের তথ্য–উপাত্ত তাঁদের ভুল ভাঙাতে পারে।
অনেকেই মনে করেন, জলবায়ুর বদল খুব স্বাভাবিক। প্রকৃতির নিয়মেই জলবায়ুতে বদল আসে। কিন্তু বিষয়টি এত সরল নয়। গত ৫০ বছরে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের তুলনায় দ্রুত বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়েছে। আইপিসিসি বলছে, ১৯৭০ সাল থেকে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ছে। শিল্পবিপ্লবের আগের সময় এবং ১৮৫০ সালের রেকর্ড করা তাপমাত্রার ভিত্তিতে এ ধরনের তথ্য দিয়েছে আইপিসিসি। এ সময়ের পলি, বরফ, গাছপালার যৌগিক বিশ্লেষণও করেছে আইপিসিসি।
অনেকে বিশ্বাস করেন, পৃথিবীর তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে মানুষ কার্বন নির্গমন বাড়ানোর কারণেই যে এমনটা ঘটছে, তা অনেকে মানতে চান না। আইপিসিসি জলবায়ু পরিবর্তনের একটি মডেল নিয়ে কাজ করছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে কোন কোন বিষয় প্রভাব ফেলছে, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এ মডেলে। এ বছর আইপিসিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বায়ুমণ্ডল, সাগর ও ভূপৃষ্ঠের উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য নিঃসন্দেহে মানুষই দায়ী।
বিশ্বের অনেকে দেশেই তীব্র শীত। এসব দেশে প্রচুর তুষারপাত হয়। এসব অঞ্চলের মানুষ মনে করে, বৈশ্বিক উষ্ণতা কিছুটা বাড়া খারাপ নয়। এ ধরনের ভ্রান্ত ধারণা তৈরির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। এ বছরের ২০ জানুয়ারি এক টুইটে ট্রাম্প বলেন, তীব্র শীত প্রমাণ করে, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়া আশঙ্কাজনক নয়। তীব্র শীতের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প সে সময় এমনও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়লেও তা উদ্বেগজনক নয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে আবহাওয়ার গড় ওঠানামা অনুসারে জলবায়ু পরিবর্তন পরিমাপের মাপকাঠি। এক দিন অথবা এক সপ্তাহ তুষারপাত হলেই কয়েক দশক ধরে গড় উষ্ণতা বাড়েনি, এমনটা প্রমাণ হয় না।
বৈশ্বিক উষ্ণতা কিছুটা বাড়লে কী হতে পারে? সাইবেরিয়ার কিছু অংশ চাষযোগ্য হতে পারে। খাদ্যের জোগান দিতে পারে। তবে উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এসব অঞ্চলের বরফ গলে আরও বড় সংকট তৈরি হতে পারে। আইপিসিসির বিজ্ঞানীরা বলছেন, দুই ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়লেও সাগরের উচ্চতা আধা মিটার বা তারও বেশি বাড়তে পারে। এর প্রভাবে উপকূলবর্তী শহরগুলো ডুবেও যেতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নানা যৌথ বিবৃতি আসে। তবে বিশ্লেষণের পর দেখা গেছে, তাঁদের মধ্যে খুব কমই জলবায়ুবিজ্ঞানী। জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে ঐকমত্য থাকাটা খুব জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে কয়েক হাজার জরিপ ও গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যে মানুষ দায়ী, এ ব্যাপারে ৯৯ শতাংশের বেশি বিজ্ঞানী একমত পোষণ করেছেন।