বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে আশা, অর্থায়ন প্রশ্নে সমঝোতা অনিশ্চিত

বিশ্বরাজনীতির বিভিন্ন বিষয়ে প্রায়ই বিপরীতমুখী অবস্থানের জন্য আরেকটি স্নায়ুযুদ্ধের কথা ওঠে যে দুই দেশ নিয়ে, সেই চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক সহযোগিতার আকস্মিক ঘোষণাকে গ্লাসগোতে বিস্ময়ের সঙ্গে স্বাগত জানানো হয়েছে। তারপরও জলবায়ু সম্মেলনের (কপ ২৬) সভাপতি অলোক শর্মার কথায়, কোনো দেশই সম্মেলনের খসড়া ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয়। সমঝোতার পথে অর্থায়নের বিষয়টিই যে বড় বাধা হয়ে আছে, সে কথারও স্বীকারোক্তি এসেছে তাঁর বক্তব্যে।

ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের সহযোগিতার ঘোষণায় বলা হয়েছে, তারা কার্বনমুক্তকরণবিষয়ক বিধিমালা তৈরি করবে। মিথেন গ্যাস উদ্‌গিরণ এবং বন উজাড়করণ বন্ধে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একসঙ্গে কাজ করার চুক্তি চলতি দশকে জলবায়ুবিষয়ক কার্যক্রমের লক্ষ্যকে আরও এগিয়ে নেবে। জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপির জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা ক্যাসি ফ্লিন বলেছেন, কয়লার ব্যবহার এবং মিথেন গ্যাস উদ্‌গিরণ কমানোর প্রশ্নে এ চুক্তি গ্লাসগোর বৃহত্তর আলোচনায় গতি বাড়াবে। তাঁর মতে, এ দুই দেশের সহযোগিতা বিশ্বের জন্য খুবই প্রয়োজন।

সাধারণভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে এই দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েন জলবায়ুবিষয়ক বৈশ্বিক সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করবে। সেই আশঙ্কা দূর হওয়ায় গ্লাসগোর সম্মেলনে সমঝোতায় উপনীত হওয়া কিছুটা সহজ হবে। গ্লাসগো শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্টের অনুপস্থিতির যে সমালোচনা প্রেসিডেন্ট বাইডেন করেছেন, তাতে কূটনীতিকদের কপালে যে চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছিল, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।

দ্বিতীয়ত, এই দুটি দেশই হচ্ছে বিশ্বের শীর্ষ দুই দূষণকারী এবং তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্‌গিরণ বড় মাত্রায় কমানো না গেলে বিশ্বের বার্ষিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার কোনোভাবেই দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লক্ষ্য তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার বিষয়ে চীন যে এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা এ দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

পরিবেশবাদীদের অনেকে অবশ্য বলছেন যে দুই দেশেরই আরও বেশি ও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। গ্রিনপিস বলেছে, গ্যাস উদ্‌গিরণ কমানোর ক্ষেত্রে যতটা বড় এবং দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন, তা এখনো পূরণ হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র ২০৩৫ সালের মধ্যে শতভাগ কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। আর চীন বলেছে তার পঞ্চদশ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২৬-৩০) কয়লার ব্যবহার বন্ধের পালা (কমানো) শুরু হবে এবং এই কাজ তারা আরও ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করবে।

কপ ২৬ সভাপতি অলোক শর্মা গতকাল সকালের সংবাদ সম্মেলনে জানান যে তাঁরা খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছেন, কিন্তু অর্থায়নের অঙ্গীকারে এখনো লক্ষ্যপূরণ হয়নি। ঘোষণার খসড়া চূড়ান্ত করার চেষ্টায় বিভিন্ন দেশ ও গ্রুপের প্রতিনিধিদের মধ্যে চলছে শেষ পর্যায়ের দর–কষাকষি। গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১২টার পর ঘোষণার চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করার কথা ছিল।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষণকারী সশস্ত্র বাহিনী

বিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন, সায়েন্টিস্টস ফর গ্লোবাল রেসপনসিবিলিটি (এসজিআর) গতকাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলেছে যে সশস্ত্র বাহিনীগুলো হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দূষণকারী। কিন্তু সব দেশ ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমন হ্রাসে তাদের প্রকাশিত পরিকল্পনা থেকে সামরিক বাহিনীকে বাদ দেওয়ায় এ দিকটিতে নজর দেওয়া হচ্ছে না। তাদের হিসাবে, বিশ্বের ৬ শতাংশ ক্ষতিকর গ্যাস উদ্‌গিরণ ঘটে সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে। তাদের ভাষায় প্যারিস চুক্তিতে এই ফাঁক থেকে গেছে, কেননা এর আগে কিয়োটো প্রটোকলের সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের চাপে সামরিক বাহিনীগুলো এই ছাড় পায়।

গত মঙ্গলবার গ্লাসগোয় যুক্তরাষ্ট্রের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে পেন্টাগন এককভাবে যতটা গ্রিনহাউস গ্যাস উদ্‌গিরণ করে, তা বিশ্বের ১৪০টি দেশের উদ্‌গিরণের সমান। তাহলে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে তিনি কীভাবে নেট জিরো অর্জনের কথা বলছেন? জবাবে পেলোসি বরাদ্দ বৃদ্ধির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন যে নিরাপত্তা উপদেষ্টারা সবাই বলছেন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তাঝুঁকি, তাই বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তবে তিনি বলেন যে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে উত্তরণের জন্য সামরিক বাহিনীও নানা প্রযুক্তিগত সমাধান খুঁজছে।